এক সময় বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদ ছিল নদীনির্ভর। নদীর পাশেই গড়ে উঠত বসতি, আর সারা বছর নদীতে পানি থাকায় ঘরে ঘরে নৌকা ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় যানবাহন। সময়ের পরিবর্তনে সেই নৌকাভিত্তিক জীবনযাত্রা ইতিহাস হয়ে গেলেও পাবনার ফরিদপুর উপজেলার চলনবিল ঘেঁষা প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বর্ষা এলেই নৌকার কদর ফিরে আসে আগের মতো। অনেক অঞ্চলে এখনো বর্ষায় নৌকাই একমাত্র চলাচলের ভরসা।
এই বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায় বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে। উপজেলার নদীতীরবর্তী হাটগুলোতে শুরু হয় নৌকা কেনাবেচা। চলতি বর্ষায় ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন আকার ও ধরনের নৌকা বিক্রি হচ্ছে এসব হাটে।
ফরিদপুর উপজেলার গুমানী নদীর তীরবর্তী এরশাদনগর হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা নৌকা সাজিয়ে রেখেছেন সারি সারি করে। বিক্রেতা সুমন জানান, তারা ইউক্যালিপটাস, আম, শিশু, কড়ই ও জারুল কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকা বিক্রি করেন। কাঠের ধরন ও মান অনুযায়ী দামে ওঠানামা হয়। যেমন—১০ হাত লম্বা ইউক্যালিপটাস কাঠের নৌকা ৩ হাজার টাকা, আর জারুল কাঠের ১৫ হাত লম্বা নৌকা ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
আরেক বিক্রেতা লিটন বলেন, “সাধারণ কাঠের নৌকা তুলনামূলক সস্তা হলেও সেগুলো ভারী এবং টেকসই কম। তবে কাঠের সঙ্গে `প্লেন সিট` ব্যবহার করে তৈরি নৌকা হালকা ও বেশি টেকসই হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি পড়ে।”
স্থানীয় বাসিন্দা টুটুল সরদার জানান, একটি নৌকা গড়ে চার `পানি` বা চার বছর টেকে। পুরোনো নৌকা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার নতুন নৌকা কিনতে এসেছেন। তাঁর ভাষায়, “দামে কম–বেশি হয় ঠিকই, তবে দরদাম ঠিকঠাক হলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।”
যদিও সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে গেছে, তবু বর্ষা এলেই চলনবিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ফিরে আসে নৌকার সেই পুরনো গুরুত্ব। নিচু জমি আর বিল–জলময় এলাকায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। তাই বর্ষা শুরু হলেই ঘাটে ঘাটে বাঁধা পড়ে নতুন নৌকা, আর হাটে জমে ওঠে বেচাকেনা—গ্রামীণ জীবনের এক চিরচেনা চিত্র যেন ফিরে আসে নতুন করে।
একুশে সংবাদ/পা.প্র/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

