৪২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন বৃদ্ধা আনোয়ারা। স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল ছিল বাড়ির ভিটা, সেটিও বিক্রি করে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন তিনি। ১৯ বছর আগে সেই মেয়েও মারা যায়। এরপর থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকম দিন পার করছেন ৭৮ বছর বয়সী এই নারী। বয়সের ভারে আজ তিনি প্রায় কর্মক্ষমহীন।
বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোই হয়ে উঠেছে কষ্টকর। বেঁচে থেকেও যেন মৃতের মতো জীবন কাটছে তার। জীবনের শেষ সময়ে একটু সচ্ছলতার আশায় বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিলেও আজও জোটেনি সেই কাঙ্ক্ষিত কার্ড।
আনোয়ারা জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের বীর পাকেরদহ এলাকার বাসিন্দা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৪৭ সালের ১ আগস্ট। সে হিসাবে তার বয়স প্রায় ৭৮ বছর। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, নারীদের ক্ষেত্রে বয়স ৬২ বছর পূর্ণ হলে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়। সেই হিসাবে আনোয়ারা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য বহু আগেই যোগ্যতা অর্জন করলেও আজও তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি সহায়তা।
জানা গেছে, মাদারগঞ্জ পৌরসভার কামারপাড়া এলাকার মৃত আহজ্জলের স্ত্রী আনোয়ারা প্রায় ৪২ বছর আগে স্বামীকে হারান। রেখে যান শুধু বাড়ির ভিটা ও একমাত্র কন্যাসন্তান। অন্যের বাসায় কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাতেন তিনি। একপর্যায়ে সেই ভিটা বিক্রি করে মেয়েকে বিয়ে দেন উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের বীর পাকেরদহ গ্রামে। মেয়ের বিয়ের পর আনোয়ারা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। তবে ১৯ বছর আগে মেয়ে মারা গেলে মেয়ের স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর আনোয়ারা হয়ে পড়েন একাকী। অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়েই কোনোভাবে দিন কাটছে তার।
বৃদ্ধা আনোয়ারা বলেন, "স্বামী, সন্তান, জায়গা-জমি কিছুই নাই। এইখানে অন্যের বাড়িতে থাকি। মাইনষে আমারে খাওন-দাওন দেয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেইকা খুব কষ্টে আছি। একটা ভাতার কার্ড পাইলে খুব উপকার হইতো।"
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও চরপাকেরদহ ইউনিয়নের প্রশাসক তৌফিকুল ইসলাম খালেক জানান, বৃদ্ধা আনোয়ারা বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে তার আবেদনের সঙ্গে মোবাইল নম্বর না থাকায় ভাতা অনুমোদন হয়নি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে বয়স্ক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/জা.প্র/এ.জে