গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজ নিচ্ছে না কেউ। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ, সেনাবাহিনীর সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার একদিন পরিদর্শনে এলেও এরপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, গত এক মাসে তিস্তার ভাঙনে অন্তত ১০০টি পরিবারের বসতভিটা এবং প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ৩০০ পরিবার ও ৫০০ একরের বেশি জমি রয়েছে ভাঙনের মুখে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৯ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে এবং ১০টি পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী প্রতি বছরই পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি করে, যা চলে প্রায় সারা বছর। স্থানীয়দের দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সরকার তিস্তার স্থায়ী নদী ভাঙন রোধ, খনন বা সংস্কারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে প্রতিবছর শত শত পরিবার গৃহহীন হচ্ছে এবং হাজার হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক, জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার পরও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
ভাটি কাপাসিয়ার লালচামার গ্রামের ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “গত ১৫ দিন ধরে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজ কেউ নিচ্ছেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ড মাত্র ৩৯ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলেছে, অথচ প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শুধু ৩৯ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে লাভ নেই, গোটা ভাঙনকবলিত এলাকায় তা ফেলতে হবে।”
কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া জানান, তার ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে তিস্তার তীব্র ভাঙনে ১০০টি পরিবারের বসতঘর ও শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। স্কুল, মসজিদসহ অনেক স্থাপনা এখন ভাঙনের মুখে। বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি সহায়তা খুবই সীমিত, ফলে পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে।
হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “ভাঙন রোধে ড্রেজিং, নদী খনন ও স্থায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বহুবার সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।” তার মতে, শুধু জিও ব্যাগ বা টিউব ফেলে তা ঠেকানো সম্ভব নয়। “স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে চরবাসীর দুর্ভোগ কোনো দিনই কমবে না,” যোগ করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টি পরিবারকে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলার কাজ চলছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, “তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে আমরা জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলছি। তবে স্থায়ী সমাধান সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।”
একুশে সংবাদ/গা.প্র/এ.জে