টিফিন বিল, ইনসেনটিভ বোনাস, ছুটির টাকা, মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা, দুই মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে খানটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। গত তিনদিন যাবত কারখানার প্রশাসন বিভাগ এবং আপরেশন বিভাগের কর্মকর্তারা কারখানায় আসে না বলেও অভিযোগ করেন শ্রমিকেরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে শ্রমিকেরা কারখানায় গিয়ে ওই নোটিশ দেখতে পায় তারা। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ কারখানায় শিল্প পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছে। কে এফ এল গ্রæপের খানটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা গ্রামে অবিস্থিত।
খানটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানার সুইং সেকশনের অপারেটর নাঈম খান, আনিছুর রহমান, ফিনিশিং সেকশনের প্যাকিংম্যান মিঠু, পলিম্যান লাকিসহ অন্যান্যরা জানান, প্রতি মাসেই কারখানা কর্তৃপক্ষ ২০ তারিখের পর বেতন দেয়। চলতি মাসসহ তাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তাছাড়া গত বছরের টিফিন বিল, ইনসেনটিভ বোনাস, ছুটির টাকা, মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা এখনো দেইনি। আমাদের বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ না করে কর্তৃপক্ষ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে।
সুইং সেকশনের অপারেটর মামুন মিয়া, ফিনিশিং সেকশনের পলিম্যান জহুরা আক্তার বলেন, কারখানায় কাজ না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ সাব-কন্টাকের মাধ্যমে কাজ এনে আমাদেরকে দিয়ে কাজ উঠিয়ে নিয়েছে। এখন বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ না করে হঠাৎ বন্ধের নোটিশ টানিয়ে কারখানা মালিক ও তাদের লোকজন পালিরয়ে গেছে। আমরা কোনো ধরনের ভাংচুর এবং বিশৃঙ্খলা করতে চায় না। মালিক অথবা তার কোনো প্রাতিনিধি এসে আমাদেরকে বকেয়া যেন পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে।
ফোল্ডারম্যান পিংকি আক্তার, ফিনিশিং সেকশনের প্যাকিংম্যান রুবেল মিয়া জানান, আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে বাসা ভাড়া থেকে কারখানায় চাকরি করেছি। চলতি মাসসহ দুই মাসের বেতন এবং অন্যান্য পাওনা বকেয়া রয়েছে। এসব বকেয়া পাওনা না দিলে বাড়ীর মালিক এবং দোকান মালিকদের বকেয়া যাওনা দিতে পারছি না। তাছাড়া সন্তানদের স্কুলের বেতন, প্রাইভেট শিক্ষকের বেতন দিতে পারতেছি না। সব পাওনাদারেরা ইতোমধ্যে আমাদেরকে তাদের টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। মনে করেছিলাম কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতনসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা দিলে ওইসব টাকা পরিশোধ করে দিব। আজ সকালে কাজে যোগ দিতে এসে দেখি অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে।
অন্যান্য শ্রমিকেরা বলেন, অবৈধভাবে কারখানার কাজ বন্ধ করে দেয়ার যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। গত তিনদিন যাবত কাজ না থাকায় আমরা সকালে এসে সারাদিন বসে থেকে বিকেল ৫টায় চলে যাই। গত তিনদিন যাবত প্রশাসন বিভাগ এবং আপরেশন বিভাগের কোনো কর্মকর্তারা কারখানায় আসে না। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে কারখানায় এসে দেখি অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ খানটেক্স ফ্যাশন্স লিমিটেডের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির উল্লেখ করেন, বর্তমান দেশের সার্বিক অস্থিরতা, অ-নিরাপত্তা দেশের গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানকে চরম বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব প্রত্যেকটি রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসের উপর মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে আমরা সাব-কন্টাক অর্ডার এনে কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করি। গত ২১ জুলাই থেকে শ্রমিকেরা অবৈধভাবে কারখানার কাজ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে আমাদের কাছে সাব-কন্টাকে অর্ডার দেওয়া কারখানার মালিকেরা তাদের সমস্ত কাজ নিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কারখানায় কোন কাজ নেই এবং কোন কাঁচামাল নেই। এ পরিস্থিতিতে কারখানা পরিচালনা করা কোনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ধারা-১৩ উপধার-০১ অনুসারে এবং বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি সাবাভিক হলে কার্যক্রম পূর্ব সময়সূচী অনুযায়ী সম্পূর্ণরুপে পরিচালনা করা হবে। পরবতী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নোটিশ কার্যকর থাকবে।
খানটেক্স ফ্যাশন্স লিমিটেডের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) হুমায়ুন কবির বলেন, হঠাৎ করে শ্রমিকেরা সাব-কন্টাকের অর্ডারের কাজ শেষ না করেই বেতন চাচ্ছে। শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় সাব-কন্টাকে অর্ডার দেওয়া কারখানার মালিকেরা তাদের সমস্ত কাজ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কারখানায় কাজ না থাকায় বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ/গা.প্র/এ.জে