রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্তত ২০ শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষা করে নিজে প্রাণ হারানো সাহসী শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, নীলফামারী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার বগুলাগাড়ী গ্রামে মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের পক্ষে ফুলেল শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন মমিনুল ইসলাম, ওআইসি আনিছুজ্জামান, ওসি সি অ্যান্ড এম ইউনিট লালমনিরহাট, জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

এর আগে একইদিন সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান এবং পুলিশ সুপার এ.এফ.এম তারিক হোসেন খান মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্বামী মনছুর আলী হেলাল, দুই পুত্র আয়ান রহীদ মিয়াদ চৌধুরী ও আদিল রহীদ মাহিব চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন, জলঢাকা থানার ওসি এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
সমাধিস্থলে এক মিনিট নিরবতা পালন ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাহেরীন চৌধুরী ছিলেন মরহুম মোহিতুর রহমান চৌধুরী ও ছাবেরা চৌধুরীর বড় কন্যা। তাঁদের পরিবার নীলফামারীর সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী পরিবার। উল্লেখযোগ্যভাবে, মাহেরীনের দাদী রওশনারা বেগম এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মা জাহানারা খাতুন ছিলেন আপন বোন। তাঁর দাদা মজিবর রহমান চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন ১৮১৯ সালে নির্মিত বগুলাগাড়ী স্কুল, যা পরবর্তীতে বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিতি পায়।
শিক্ষাজীবন শেষে মাহেরীন ২০০২ সালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০৮ সালে শরীয়তপুর জেলার চর আত্রাই গ্রামের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মনছুর হেলালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের দুই ছেলে— বড় ছেলে আয়ান রহীদ মিয়াদ চৌধুরী ও-লেভেল শেষ করেছে এবং ছোট ছেলে আদিল রহীদ মাহিব চৌধুরী ও-লেভেল পরীক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আগুন লাগার পূর্বে মাহেরীন চৌধুরী নিজের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বের করে আনেন। কিন্তু ভেতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে তিনি আবারও ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। অন্তত ২০ জনকে উদ্ধার করলেও নিজে দগ্ধ হন। পরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকাল ৪টায় নীলফামারীর বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। এর আগে ভোর সাড়ে ৪টায় রাজধানীর উত্তরার গজল আজম জামে মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
একুশে সংবাদ/নী.প্র/এ.জে