কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ মোবারক হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়ির আশপাশে এসে প্রাণনাশের ভয় দেখাচ্ছে বলে দাবি করেছেন নিহতের স্বজনরা। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে শহীদ মোবারকের পরিবারে।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে করিমগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মোবারকের ছোট ভাই মোশারফ হোসেন।
জানা গেছে, শহীদ মোবারক হোসেন ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুর আগে তিনি রায়েরবাগের আপন বাজার এলাকায় একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানে কাজ করতেন। স্ত্রী, ছোট সন্তান, ভাই ও মাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। মৃত্যুর পর পরিবারটি গ্রামের বাড়ি, করিমগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব নয়াকান্দিতে ফিরে আসে। বর্তমানে তার ছোট ভাই মোশারফ হোসেন সেই দোকানে কাজ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নিহতের স্ত্রী শিউলী বেগম বলেন, “আমার স্বামীকে হারানোর পর থেকেই আমরা পরিবারসহ আতঙ্কে আছি। গত কয়েকদিন ধরে গভীর রাতে কিছু অজ্ঞাত লোক জানালার পাশে এসে মামলা তুলে নিতে বলছে। তারা হুমকি দিচ্ছে, মামলা না তুললে আমাদের দুটি ছোট বাচ্চাকে তুলে নিয়ে যাবে, এমনকি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেবে।”
মোবারকের ভাইয়ের স্ত্রী পপি আক্তার বলেন, “আমার জা তার স্বামীকে হারিয়েছেন, শাশুড়ি তার বড় ছেলেকে হারিয়েছেন। ছোট্ট আদিবা বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে। আমরা কয়েকজন নারী মিলে এই বাড়িতে থাকি। পাশে কোনো পুরুষ মানুষ নেই, তাই ভয় আরও বেশি। প্রতি রাতেই জানালার পাশে এসে ভয় দেখায় — মামলা তুলে না নিলে ভয়ানক পরিণতি হবে। আমার স্বামী ঢাকায় থাকেন, তাকেও নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি।”
মোবারকের ছোট ভাই মোশারফ হোসেন বলেন, “আমার ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আমার মা বাদী হয়ে রায়েরবাগ থানায় মামলা করেছিলেন। সেই মামলার পর থেকেই আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আজ করিমগঞ্জ থানায় জিডি করেছি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের যেন দ্রুত নিরাপত্তা দেওয়া হয় এবং যারা হুমকি দিচ্ছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়। আমরা পরিবার নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে চাই।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর মেয়ের জন্য চিপস কিনতে বেরিয়ে রায়েরবাগের আপন বাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মোবারক হোসেন। পরিবারের দাবি, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।
একুশে সংবাদ/কি.প্র/এ.জে