পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে পূর্বপরিকল্পিত ও মিথ্যা মামলা খারিজ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জামায়াতে ইসলামীর বালিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক আমীর ও সমাজসেবক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে একদল ব্যক্তি। নেতৃত্ব দেন তেজগাঁও থানা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন।
রোববার সকালে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের নূরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনের রাস্তায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বালিপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন—বালিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি গফ্ফার হাওলাদার, সহসভাপতি হাসেম হাওলাদার, বেলায়েত বয়াতী, যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার হাওলাদার, প্রচার সম্পাদক আ. রহিম ফকির, সদস্য জিয়া হাওলাদার, ডালিম হাওলাদার, ইসমাইল, শাহআলী বেপারী, আ. রব হাওলাদার, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী।
এদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণসহ একাধিক অভিযোগ ও মামলার তথ্য স্থানীয় সূত্রে পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩ নভেম্বর, শ্রমিকলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রিজিয়া আক্তার (৩২) নামে এক নারীকে প্রলুব্ধ করে খুলনা জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ একটি ধর্ষণ মামলা করা হয়। মামলার তদন্ত দায়িত্ব পায় পিবিআই।
তদন্তে দেখা যায়, ঘটনার তারিখে বাদী রিজিয়া আক্তার তার খুলনার বাসায় অবস্থান করছিলেন এবং মামলায় উল্লিখিত ঘটনার কোনো প্রমাণ মেলেনি। একমাত্র খুলনা থেকে দেওয়া স্বাক্ষী বাদীর চাচাতো বোনও মামলার সঙ্গে নিজের কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। ফলে পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত ২৫ মার্চ ২০২৪ মামলাটি খারিজ করে দেয়।
এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে ৮ জুন কোরবানির পরদিন, জসিম উদ্দিন ও তার সঙ্গে থাকা ২০–২৫ জন মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী চরিত্রের লোকজন মুহাম্মদ নাসির উদ্দীনের ওপর হামলা চালায়। ঘটনাটি ঘটে চৌকিদার হাট সংযোগ সেতুর কাছে মোশাররফ হোসেন হাওলাদারের বাড়ির সামনে।
এসময় নাসির উদ্দীনের সঙ্গে থাকা ৭ জন আহত হন। হামলাকারীরা ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। পরে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে নাসির উদ্দীন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ব্যক্তি জানান, তাদের ভুল বুঝিয়ে সেখানে নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, জসিম উদ্দিন এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছেন এবং স্বাক্ষীদের হুমকি দিচ্ছেন যাতে কেউ নাসির উদ্দীনের পক্ষে না দাঁড়ায়।
অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন বলেন, “নাসির উদ্দীন আমার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা করেছে। আমি শুধু আত্মরক্ষার্থে মানববন্ধন করেছি।” তবে সাংবাদিকদের কাছে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরির কপি ছাড়া অন্য কোনো মামলার কাগজ দেখাতে পারেননি।
সাবেক জামায়াত নেতা নাসির উদ্দীন বলেন, “জসিম উদ্দিন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আমাকে হেয় করার জন্য এবং আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মিথ্যা অভিযোগ এনে মানববন্ধনের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
বালিপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, “নাসির উদ্দীনের ওপর হামলার বিষয়টি নিষ্পত্তির কথা থাকলেও পরে মানববন্ধনের নামে ঘটনা নতুনভাবে উসকে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মারুফ হোসেন বলেন, “উভয় পক্ষ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকায় কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না।”
একুশে সংবাদ/পি.প্র/এ.জে