নড়াইলের তুলারামপুরে বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ায় বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল ঐতিহাসিক সরদারভিটা জামে মসজিদ। এটি ইউনিয়নের দ্বিতীয় প্রাচীনতম মসজিদ। এর আগে শের শাহ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল তরফদারবাড়ি জামে মসজিদ।

জানা গেছে, মসজিদ নির্মাণে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামের এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি দলিল উদ্দিন মোল্যা ১৮৮৯ সালে চার শতক জমির ওপর খড়ের ছাউনি ও মাটির দেয়াল দিয়ে ছোট পরিসরে মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরে পাকিস্তান শাসনামলে স্থানীয়দের সহায়তায় টিনের ছাউনি ও পাকা দেয়াল নির্মাণ করে মসজিদটি সম্প্রসারিত করা হয়।

সেই সময় মসজিদে ইমামসহ সর্বোচ্চ ২৭ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। প্রবীণদের ভাষ্যমতে, জনবসতি কম থাকায় শুক্রবার ছাড়া মুসল্লিদের জোগাড় হতো না। তখন এলাকাটি ছিল ঘন বনজঙ্গলে ঘেরা, যার ফলে মসজিদে নিয়মিত মুসল্লি উপস্থিতি কল্পনাই করা যেত না।

পাকিস্তান শাসনামলের পর থেকে জনবসতি বাড়তে থাকায় মুসল্লির সংখ্যাও বাড়ে। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয়রা মসজিদটি পুনঃনির্মাণের প্রয়োজন অনুভব করেন। গ্রামের মানুষের সহায়তায় আরও তিন শতক জমি বাড়িয়ে মোট সাত শতক জায়গার ওপর মসজিদের একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়।

সবশেষ ২০১৮ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে মসজিদটির দ্বিতল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে একতলার ফ্লোর এবং বাইরের দেয়ালে টাইলস বসানো হয়েছে। দ্বিতল ভবনের কাজও এগিয়ে চলছে। নির্মাণ শেষে মসজিদটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

তুলারামপুর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ও ব্যাংকার ইমদাদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষ এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সে সময় এখানে খুব কম লোকের বসবাস ছিল, আর বর্ষা মৌসুমে জায়গাটি পানিতে থইথই করত। তাই উঁচু ভিটার ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এখন দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হলে প্রায় ১০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে ইউনিয়নে নয়টি মসজিদ থাকলেও এই মসজিদটি বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা আমাদের জন্য গর্বের।”

তুলারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশেই মসজিদটি অবস্থিত। আমি এবং আমার পিতা, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা—উভয়েই মসজিদের উন্নয়নে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। বর্তমানে মসজিদটি বাইরের ও ভেতরের সৌন্দর্য বর্ধনে টাইলস দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে।”

একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে