গত কয়েক মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও মান্দার চকউলী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ইএফটির মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম অবৈধ প্রক্রিয়ায় ২০০২ সালের ১ আগস্ট চকউলী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর সব কিছুতে দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে নিজের ইচ্ছামত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা, ক্ষমতার অপব্যাবহার দেখিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে খারাপ আচরণ, এমনকি নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকার অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অথচ, প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননা। এসব বিষয় নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানের পর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় এলাকাবাসী। সে সময় থেকে অদ্যবধি অসুস্থতা ও বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে তিনি কলেজে অনুপস্থিত, তবুও ইএফটির মাধ্যমে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ, একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরেও তিনি কোনো সন্তোষজনকভাবে সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং নিজের আত্মরক্ষার্থে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করেন। আর সেকারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়মিত কলেজে না এসেও ইএফটির মাধ্যমে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানের পর অত্র এলাকার একটি কুচক্রী মহল অসৎ উদ্দেশ্যে আমাকে পদত্যাগের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। পরবর্তীতে আমি তাদের অনৈতিক দাবি মেনে না নিয়ে দ্বিমত পোষণ করায় তারা আমাকে প্রতিষ্ঠানে যেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এতদিন অনুপস্থিত থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বেশকিছু দিন যাবৎ ছুটিতে আছি। বর্তমানে রাজশাহীর বাসায় অবস্থান করছি। তার দাবি যে, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী ইএফটির মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন তিনি। অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি, সন্তোষজনক ফলাফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান অ্যাডহক কমিটির শিক্ষানুরাগী সভাপতি আব্দুল মান্নান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষক প্রতিনিধি আজাহারুল ইসলাম কাজল এবং অভিভাবক সদস্য দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব সততা, ন্যায় নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করায় স্থানীয়রা সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২৮ জন এবং শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৪ শত জন। ঐতিহ্যবাহী সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল লতিফ বলেন, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী কাউকে জোর করে পদত্যাগ করানো যাবে না। তবে, ৫ আগস্টের পর এত দীর্ঘ সময় ছুটিতে থাকার বিষয়ে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও ইএফটির মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলনের বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সম্প্রতি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে স্বপদে পুনর্বহালের দাবিতে একটি আবেদনপত্র দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে