AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শিক্ষকদের কেন বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হবে


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
১২:০৭ এএম, ৭ নভেম্বর, ২০২৫

শিক্ষকদের কেন বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হবে

মাধ্যমিকের বেসরকারি শিক্ষকরা টানা দশ দিনের আন্দোলন শেষে অবশেষে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ি ভাতা আদায় করেছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে তারা শনিবারেও ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন—এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো—একজন শিক্ষককে তার ন্যায্য অধিকার পেতে কেন বারবার রাস্তায় নামতে হয়?

বৈষম্যের শিকড়ে উপেক্ষা

দেশের শিক্ষার বিশাল অংশই চলে বেসরকারি পর্যায়ে। অথচ সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য চরম। বহু সরকার এসেছে, গেছে—কেউ এই অসাম্যের গিরিখাত ভরাট করতে পারেননি। যখন শিক্ষকরা সবকিছু বন্ধ করে ঢাকায় এসে রাজপথে দাঁড়ান, তখনই কেবল আলোচনার টেবিল বসে। অথচ শিক্ষানীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হওয়া উচিত রাজপথের বাইরে—রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের মধ্যেই।

১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের অভিন্ন বেতনস্কেল চালু করেছিলেন—এটি ছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু এরপর বৈষম্য আবার বেড়েছে। এরশাদ আমলে শিক্ষা প্রায় জাতীয়করণের পর্যায়ে পৌঁছালেও শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে সাহস দেখিয়েছিলেন, কিন্তু সব সমস্যার সমাধান তখনও হয়নি।

২০১৩ সালে শেখ হাসিনা সরকার আরও ২৬ হাজার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। এতে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা কিছুটা বাড়লেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের কাঠামো তৈরি হয়নি। শিক্ষক পেয়েছেন বেতন, কিন্তু শিক্ষা হারিয়েছে মান।

মাধ্যমিকের অবহেলা ও বিভাজনের ফল

প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের পরও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়কে বাইরে রেখে দেওয়া হয়। ফলে একই শিক্ষাব্যবস্থার দুটি ভিন্ন জগৎ তৈরি হয়েছে—একদিকে সরকারি শিক্ষক, অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষক। এই বিভাজন শুধু শিক্ষকদের নয়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ওপরও প্রভাব ফেলছে। শিক্ষকেরা যখন আন্দোলনে ঢাকায় আসেন, তখন বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস; ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার ধারাবাহিকতা।

বাস্তবে দেখা যায়, রাষ্ট্র পুলিশ ও প্রশাসনকে লালন করতে পারে—কারণ তারা ‘সরকারকে রক্ষা’ করে। কিন্তু শিক্ষকরা তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করেন; তাদের জন্য রাষ্ট্রের সেই দায়বোধ কোথায়?

শিক্ষানীতিতে জবাবদিহি চাই

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ও নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্বের। ফিতা কাটা, উদ্বোধনী বক্তৃতা আর পার্টির লোক বসানো দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা টেকসই হয় না। দরকার পেশাদার প্রশাসন, যাদের মূল লক্ষ্য হবে শিক্ষক ও শিক্ষার মানোন্নয়ন।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় ধীরে ধীরে জাতীয়করণের আওতায় আনা যেতে পারে। শহরের ঐতিহ্যবাহী ও আর্থিকভাবে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বায়ত্তশাসিত রাখা যেতে পারে। অন্যদিকে, গ্রামের স্কুলগুলোকে জাতীয়করণ করলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই উপকৃত হবেন।

শিক্ষককে মর্যাদা দিলে তবেই শিক্ষা বাঁচবে

শিক্ষক যেন পড়াতে গিয়ে পেটের চিন্তায় না থাকেন—এই নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। সেটা জাতীয়করণের মাধ্যমে হোক বা বিশেষ ভাতা ও সহায়তার ব্যবস্থায়—যেভাবেই হোক। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তবে শিক্ষক হচ্ছেন সেই মেরুদণ্ডের হাড়গোড়। তাঁকে ভাঙা অবস্থায় রেখে কোনো জাতি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

শিক্ষকদের প্রতি এই অবহেলা বন্ধ করতে হবে এখনই। না হলে বারবারই শিক্ষককে রাজপথে নামতে হবে—আর শিক্ষার মান নামবে তলানিতে।

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

Link copied!