মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও নামের আগে ‘ডা.’ পদবি ব্যবহার ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অভিযোগে এক কথিত চিকিৎসকের কাছে তথ্য জানতে চাওয়ায় এক সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গত ১১ জুন (বুধবার) বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে তিনি দরগ্রাম ইউনিয়নের গাছবাড়ি এলাকার গোলাপ হোসেন নামের এক কথিত চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। অভিযোগ রয়েছে, গোলাপ হোসেন এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়াই নিজের নামের আগে ‘ডা.’ ব্যবহার করে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন এবং প্রেসক্রিপশন লিখছেন।
সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বিষয়টির বৈধতা জানতে চাইলে গোলাপ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল করেন এবং বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, বুক টান দিয়া ছিড়া ফালামু। যদি আমার নামে কোনো খবর ছাপো, তাহলে তোকে দেখে নেব।”
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে সাটুরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেকোনো সময় আমার ক্ষতি হতে পারে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোলাপ হোসেন তার পিতা লুৎফর রহমান ও ভাইদের নিয়ে দরগ্রাম বাজারে “এ রহমান ফার্মেসি” নামে একটি দোকান চালান। তারা বড় করে ‘ডা.’ লিখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজেদের এমবিবিএস চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন, অথচ তাদের কারোরই কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা ডিগ্রি নেই।
স্থানীয়ভাবে প্রচার আছে, তাদের ভুল চিকিৎসায় তেবারিয়া এলাকার দুই সন্তানের জননী আনারকলির মৃত্যু হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি আপোষে মীমাংসা করা হয়।
সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ডিগ্রি ছাড়া কিভাবে কেউ চিকিৎসক পরিচয়ে প্রেসক্রিপশন দেন তা জানতে চাওয়াতেই আমাকে হুমকি ও গালিগালাজ করা হয়। এতে আমার পেশাগত স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়েছে। আমি সঠিক তদন্ত ও আইনি প্রতিকার চাই।”
অভিযুক্ত গোলাপ হোসেন এবং তার ভাই সুমন বলেন, “আমরা রোগীদের কথামতো চিকিৎসা দেই।” আনারকলির মৃত্যুর ব্যাপারে তারা বলেন, “বিষয়টি আপোষে মীমাংসা হয়েছে।” তবে ‘ডা.’ পদবি ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে ফোন কেটে দেন।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, “হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ‘ডা.’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। কেউ এমন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ/মা.প্র/এ.জে