ব্যাংকিং গ্রাহকসেবাকে আরও সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন করতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজীবপুর উপজেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক পিএলসি এটিএম বুথ স্থাপন করে ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়।
উদ্দেশ্য ছিল, গ্রাহকরা যাতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ২৪ ঘণ্টা তাদের প্রয়োজন অনুসারে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এটিএম বুথ ব্যবহারে ব্যাংকের উপর চাপ কমবে গ্রাহকরা স্বল্প সময়ে টাকা উত্তোলন করলে তাদের সময় সাশ্রয় হবে। নতুন বুথ হওয়ার পর অনেকেই ঝামেলা কমাতে এটিএম কার্ডও সংগ্রহ করেন ব্যাংক থেকে।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই প্রতিমাসের বেশিরভাগ সময় অচল থাকে এই বুথ। কার্যকরী এবং যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘নেটওয়ার্ক সমস্যাজনিত কারণে টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে না’ মর্মে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে।
সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ আপগ্রেডেশনের কাজের জন্য বুথটি বন্ধ করা হয় ১৬ দিনের জন্য, এরপর আর চালু হয়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রাহকরা অভিযোগ করও তারাও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি এটিএম বুথটি সচল করার ব্যাপারে।
সোনালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহারকারী উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামের জয়নুল আবেদিন নামের এক গ্রাহকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার চেক বই নেই কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করি। ঈদের আগে বুথে গেলাম টাকা উঠাতে তারা জানাল নেটওয়ার্ক সমস্যা। ম্যানেজারের সাথে কথা বললাম, তাতেও কোনো সমাধান হলো না। পরে পার্শ্ববর্তী শেরপুরে জেলা শহরে গিয়ে টাকা উত্তোলন করেছি।
আনিসুর রহমান নামের আরেকজন গ্রাহকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত ঈদের সময়ও টাকা তুলতে পারিনি এবারও বুথ বন্ধ। গ্রাহকদের চরম হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজীবপুর উপজেলা সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকায় চাকরিত উপজেলার আরেক বাসিন্দা মাজেদুর রশীদ বলেন, নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ আপগ্রেডেশনের কথা বলে এই বুথ বন্ধ করা হয়েছিল, কথা ছিল আপগ্রেডেশন হলে আরও দ্রুত নিরাপদ এবং নিরবচ্ছিন্ন কার্ড লেনদেন নিশ্চিত হবে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে বুথটি ২ মাস থেকে বন্ধ। এটি চালুর কোনো উদ্যোগ নেই।
রাজীবপুর উপজেলা শহরের হাইস্কুল গেটের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ফারুক আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকে বাড়ি এসেছেন তারা ভেবেছেন বাড়ি গিয়ে কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় খরচ করবেন। কিন্তু বুথে গিয়ে দেখেন বুথ বন্ধ অন্য ব্যাংকের বুথে গিয়ে টাকা উত্তোলন করবেন সেটিও পারছেন না।
সোনালী ব্যাংকের এই বুথ জনসাধারণের জন্য শুধু হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।
ঈদের আগে প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দেয়, ব্যাংক ছুটির মাঝেও গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে এটিএম বুথ সার্বক্ষণিক সচল রাখতে হবে। গ্রাহকেরা যাতে টাকার সংকটে না পড়েন। রাজীবপুর উপজেলার সোনালী ব্যাংক পিএলসি এই নির্দেশনা পালন করেনি। ব্যাংক বন্ধ থাকায় এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে না পেড়ে সমস্যায় পড়েছেন গ্রাহকেরা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এটিএম বুথ দুইভাবে পরিচালিত হয়। যেসব এটিএম বুথ ব্যাংক শাখা সংলগ্ন, সেসব বুথ পরিচালিত হয় সংশ্লিষ্ট শাখার তত্ত্বাবধানে। এছাড়া যেসব ব্যাংকের এটিএম বুথ শাখা থেকে দূরে স্বতন্ত্র স্থানে রয়েছে, সেসব বুথ পরিচালিত হয় বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এসব প্রতিষ্ঠান বুথে টাকা জমার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বুথের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে পারে, তাদের নিজ ব্যাংকের কোন এটিএম চালু ও কোনটি বন্ধ। রাজীবপুর উপজেলার সোনালী ব্যাংকের বুথটি ২ মাস থেকে একটানা বন্ধ থাকলেও ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
রাজীবপুর উপজেলার সোনালী ব্যাংক পিএলসি ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম মিঠু বলেন, আমাদের বুথটি বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। অনেকবার তাদের বলা হয়েছে, আমাদের আঞ্চলিক অফিসেও জানানো হয়েছে, তবুও সচল করা যায়নি এই বুথটি। গ্রাহকরা প্রায় দিনই তার কাছে অভিযোগ করেন বলে জানান তিনি। কতদিন লাগবে বুথটি সচল হতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটা সঠিক দিনক্ষণ বলতে পারছি না। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সোনালী ব্যাংক পিএলসি শেরপুর অঞ্চলের এজিএমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
একুশে সংবাদ/কু.প্র/এ.জে