শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতালে এক রাতেই ৬টি নরমাল ডেলিভারি। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্প্রতি নরমাল ডেলিভারিতে এক অসাধারণ অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে মাত্র দুই মাসে ২৬৮টি সন্তান জন্ম নিয়েছে অস্ত্রোপচার ছাড়াই।
এ সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন, যিনি কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালমুখী ডেলিভারি সেবাকে বিশ্বাসযোগ্যতা এনে দিয়েছেন।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় সাধারণত মা ও পরিবারগুলো সিজারিয়ান ডেলিভারিকে নিরাপদ মনে করলেও শ্রীমঙ্গলের এই হাসপাতাল তা বদলে দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত এপ্রিল মাসে ১৪৪টি এবং মে মাসে ১২৪টি সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে। যেখানে মাত্র ৫টি ছিল সিজার। এছাড়া গত ১ জুন রাতেই ৬টি নরমাল ডেলিভারি নিরাপদে সম্পন্ন হয়েছে।
এই সাফল্যের কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গর্ভবতী মায়েদের জন্য সময়োপযোগী কাউন্সিলিং ও পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। হাসপাতালে নিযুক্ত মিডওয়াইফ ও নার্সরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নরমাল ডেলিভারির নিরাপত্তা ও সুবিধা নিয়ে তাদের আগ্রহী করে তোলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুপারভাইজার বশিরুন নেসা বলেন, আমাদের হাসপাতালে গত দুই মাসে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১ জুন রাতেই ৬টি নরমাল ডেলিভারি নিরাপদে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা গর্ভবতী নারীদের আমরা বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি। প্রসূতি মায়েদের বাসা-বাড়িতে গিয়েও নিয়মিত কাউন্সিলিং করছি। নরমালে সন্তান প্রসবের জন্য পরিকল্পনামাফিক আমরা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি।
হাসপাতালের ইনচার্জ লেবার হাসিনা আক্তার জানান, ডা. সিনথিয়া তাসমিন যোগদানের পর থেকেই নরমাল ডেলিভারির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে গর্ভবতী মায়েরা যেমন নিরাপদে সন্তান জন্ম দিতে পারছেন, তেমনি খরচও বাচছে।
একাধিক প্রসূতি জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক, মিডওয়াইফ এবং নার্সদের আন্তরিকতা ও সেবা পেয়ে তারা প্রাইভেট ক্লিনিকে না গিয়েই নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পেরেছেন। অনেক সময় ডেলিভারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মা ও নবজাতক সুস্থভাবে বাড়ি ফিরছেন।
মিডওয়াইফ মনি বেগম ও রুবিনা আক্তার বলেন, তারা প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এমনকি কোনো মা হাসপাতালে আসতে না পারলে তার বাড়িতে গিয়ে কাউন্সিলিং করেন।
এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন বলেন, চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফদের কর্মপরিকল্পনা করে দিচ্ছি। এতে তারা আন্তরিকতা সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। যার কারণে আমাদের এখানে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে। এখানে নিরাপদ নরমাল ডেলিভারি করায় গর্ভবতী মায়েরা সরকারি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। হাসপাতালে ডেলিভারি ঝুঁকিমুক্ত বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিতে পারলে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা আরও বাড়বে এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস পাবে।আগামীতেও এই হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির সফলতা ধরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, চা বাগান অধ্যুষিত অঞ্চলে এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা একটি মাইলফলক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে নরমাল ডেলিভারির প্রতি মায়েদের আগ্রহ আরও বাড়বে।
একুশে সংবাদ /মৌ.প্র/এ.জে