আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। উপজেলার নীলা মার্কেট, শিমুলিয়া, মুড়াপাড়া, গোলাকান্দাইল, ভূলতা, কাঞ্চন ও ৩০০ ফিট এলাকার হাটগুলো এখন গরু-ছাগলে পরিপূর্ণ। বিকেলের পর থেকে হাটগুলোতে ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। পাশাপাশি খামার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও চলছে পশু কেনাবেচা।
উপজেলায় এবার কোরবানির জন্য মোট ১৩টি হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর কদর বেড়েছে। খামারিরা জানান, এ বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির দেশি গরুর চাহিদা বেশি, বড় গরুর প্রতি আগ্রহ তুলনামূলক কম।
ভূলতা হাটে গরু কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাড়ির কাছেই হাট হওয়ায় সুবিধা হচ্ছে। ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় ভালো মানের গরু মিলছে, কোরবানির জন্য যথেষ্ট।”
একই হাটের বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন জানান, “দেশি গরুর চাহিদা বেশি, বিশেষ করে খামারে দুধের বাছুর থেকে বড় করা গরু। এসব গরুতে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়নি।”
ঐতিহ্যবাহী শিমুলিয়া হাটে দুপুরের পর থেকে দেখা যায় ব্যাপক ভিড়। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই এখানে গরু কিনতে আসছেন। গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকে আগত খামারিরাও গরু এনেছেন বিক্রির জন্য।
এক বিক্রেতা রহিম মিয়া বলেন, “ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর ভালো দাম পাচ্ছি। ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে অনেক গরু বিক্রি করেছি।”
গোলাকান্দাইল হাটে পাওয়া গেছে ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকার দেশি গরু। পাশাপাশি ছাগল, খাসি ও মহিষের সরবরাহও রয়েছে পর্যাপ্ত। ক্রেতা লোকমান মিয়া বলেন, “দালালমুক্ত পরিবেশ, দাম তুলনামূলক কম। হাটে বিশৃঙ্খলাও নেই।”
মুড়াপাড়া হাটের বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, “ছোট গরুর চাহিদা বেশি। ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে অনেক গরু বিক্রি করেছি। বড় গরু দেখছে অনেকে, কিনছে কম।”
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সজল কুমার দাশ জানান, “উপজেলায় ২২৪টি খামারে মোট ১৫ হাজার ৮৫৪টি গরু প্রস্তুত রয়েছে, যেখানে কোরবানির চাহিদা প্রায় ৮ হাজার। খামারিরা কেমিক্যাল ছাড়াই পশু মোটাতাজা করেছেন। তিনটি মনিটরিং টিম পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্রেতারা চাইলে পশু কেনার আগে হাটে উপস্থিত মেডিকেল টিম থেকে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন।”
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, “সব হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জাল নোট শনাক্তে ব্যাংকের সহায়তায় মেশিন বসানো হয়েছে।”
প্রায় প্রতিটি হাটেই কোরবানিকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে ক্রেতারা চাচ্ছেন, কৃত্রিমভাবে গরুর দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা রোধে সরকারের তদারকি আরও জোরদার হোক।
একুশে সংবাদ /না.প্র/এ.জে