গত কয়েকদিনের অব্যাহত বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে জেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মৌলভীবাজার শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মনু নদীর চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার এবং রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সাত উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কের শিমুলতলা মাতারকাপন এলাকায় হাঁটু পানির সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সদর উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, দোকানপাট ও বসতঘর জলমগ্ন রয়েছে, যা যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। শহরের ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন, কমলগঞ্জের রহিমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, কুলাউড়ার জয়চন্ডী, কুলাউড়া সদর ও পৃথিমপাশার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হাকালুকি হাওরেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বড়লেখার পাঁচটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। বন্যার কারণে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, খামারিদের মাছ ঢলে ভেসে গেছে।
কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিখড়িয়া এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাঁধায় মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাধের কাজ বন্ধ থাকায় পানি প্রবেশ করেছে। কুলাউড়া পৌরসভার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডসহ জয়পাশা উত্তর ও দক্ষিণ এবং দানাপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ছয়টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এবং ২০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, বড়লেখা শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ১৪৪ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বড়লেখা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, বন্যাক্রান্ত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, জারিক্যান ও ব্লিচিং পাউডার বিতরণ চলছে। প্রয়োজন হলে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা হবে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: খালেদ বিন অলিদ জানান, গত তিন দিনে ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের উজানে বৃষ্টি না হলে পানি কমতে শুরু করবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বালুর বস্তা দিয়ে ভরাটের কাজ চলছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন জানান, অতিভারী বর্ষণে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন জানান, বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে জেলার সাত উপজেলায় ১১৫ মেট্রিক টন চাল এবং ২১ লক্ষ টাকা অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ / মৌ.প্র/এ.জে