বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম চাষ করেও তা রপ্তানি করতে পারছেন না ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কৃষকরা। ব্যাগ ও গ্যাপ পদ্ধতিতে চাষ করা বিষমুক্ত, পোকামুক্ত এসব আম বিদেশে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন হলেও প্রকল্পভুক্ত না থাকায় রপ্তানির প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি অব্যবস্থা। ফলে একদিকে যেমন কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মুনাফা থেকে, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আয়।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় জানান, ‘বিদেশে আম রপ্তানির জন্য একটি প্রকল্প রয়েছে—“রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প”। এ প্রকল্পের আওতায় থাকা এলাকার আম রপ্তানি করা হয়। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ টন আম চীনে রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু কোটচাঁদপুর উপজেলা এই প্রকল্পের আওতায় না থাকায় এখানকার আম বিদেশে পাঠানো যাচ্ছে না। আগামীতে এ অঞ্চলে প্রকল্প সম্প্রসারণের চিন্তা করা হচ্ছে।’
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম উৎপাদন এলাকা হিসেবে কোটচাঁদপুরে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক বাজার ব্যবস্থা। হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, বানানা, কাটিমন, বারি আম-৩ ও ৪, মল্লিকা, বিশ্বনাথসহ নানা জাতের আম এখানে উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বানানা, কাটিমন ও হিমসাগর জাতের আম চাষ হচ্ছে ব্যাগ পদ্ধতিতে, আর আম্রপালি চাষ হচ্ছে গ্যাপ (GAP) পদ্ধতিতে—যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং রপ্তানিযোগ্য।
সলেমানপুর গ্রামের আম চাষি আবুল হোসেন বলেন, “এ বছর আমি ১০ বিঘা জমিতে আম্রপালি ও হিমসাগর আম চাষ করেছি। এর মধ্যে ২ টন হিমসাগর এবং ১০ টন আম্রপালি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য মানে চাষ করেছি ব্যাগ ও গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রতি ব্যাগে খরচ হয়েছে ১ টাকা করে, কিন্তু বাজারে এই আমের দাম সাধারণ আমের তুলনায় ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেশি। কারণ ব্যাগের আম বিষমুক্ত ও পোকামুক্ত থাকে, ফলে এর চাহিদাও বেশি।”
তিনি আরও বলেন, “আমগুলো বিদেশে পাঠানো গেলে আমরা যেমন লাভবান হতাম, তেমনি সরকারও আয় করত রাজস্ব। পাশাপাশি আরও অনেক কৃষক এ ধরনের চাষে আগ্রহী হতেন। এতে করে দেশে বিষমুক্ত ফলের সরবরাহও বাড়ত।”
৪ বছর আগে কোটচাঁদপুরে ব্যাগ পদ্ধতিতে আম চাষ শুরু করেন আব্দুল আজিজ নামের এক চাষি। এখন তার দেখাদেখি আরও অনেকে এ চাষে যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ৫০ হাজার ব্যাগে আম চাষ করা হয়েছে এবং গ্যাপ পদ্ধতিতেও আম উৎপাদন হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে, যা রপ্তানির জন্য প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন জানান, “চলতি মৌসুমে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ হেক্টর, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। কয়েক বছর আগে এক-দুইবার বায়ারদের মাধ্যমে কোটচাঁদপুর থেকে আম রপ্তানি হয়েছিল, তবে এরপর তা থেমে যায়। এ বছর কিছু বায়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন আম্রপালি কিনতে।”
তবে প্রকল্পভুক্ত না হওয়ায় বিদেশি বাজারে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না সম্ভাবনাময় এই পণ্যটি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি না পড়লে কৃষকদের আগ্রহ কমে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকেই। আম চাষিরা বলছেন, “সরকার যদি প্রকল্পের আওতায় আমাদের অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে দেশীয় আম বিশ্ববাজারে স্থান করে নিতে পারবে, আর কৃষকরাও পাবে ন্যায্য মূল্য।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
একুশে সংবাদ /ঝি.প্র/এ.জে