AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শহীদ জিয়ার সহচর প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মীর মোজাফফর এখনো পাননি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি



শহীদ জিয়ার সহচর প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মীর মোজাফফর এখনো পাননি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা এবং গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সরকারি স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মীর মোজাফফর আহমদ।


মীর মোজাফফর আহমদের জন্ম চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নে। পিতা মীর মৌলভি মরহুম তোফায়েল আহমেদ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নাজিরহাট কলেজের ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বয়স ছিল একুশ-বাইশ বছর।


মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতের আগরতলায় ট্রেনিং নিতে বৃহস্পতিবার দিন রওনা হন। পথিমধ্যে ভূজপুরের একটি স্কুলে রাত্রিযাপন করেন। তার সঙ্গী ছিলেন প্রফেসর মাহমুদুল আলম, শাহ আলম মাস্টার, মীর আবদুল্লাহ। রামগড় পৌঁছানোর পর ফটিকছড়ি ও আশপাশ এলাকা থেকে আরও অনেক তরুণ তাদের সঙ্গে যুক্ত হন।


তারা দ্বিতীয় গ্রুপের অংশ হিসেবে রামগড়ের বাছাই কেন্দ্রে উপস্থিত হন। সেখান থেকে মীর মোজাফফর আহমদ এবং প্রফেসর মাহমুদুল আলম আগরতলা যাওয়ার অনুমতি পান। আগরতলার তেলিয়া মোড়া ট্রেনিং ক্যাম্পে এলএমজি, ত্রি-এস মোটর, স্ট্যান্ডগান ও রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।


আগরতলায় ট্রেনিং করার সময় সঙ্গে ছিলেন, ফটিকছড়ির মির্জা আবু, মির্জা বাবর, শফিউল ইসলাম (পটিয়া), মিরসরাইয়ের জাফর, পটিয়ার এসএম ইউসুফ, রাউজানের মোরশেদ, নাজিম উদ্দিন, বাঁশখালীর সুলতান মাহমুদ, কক্সবাজারের কিবরিয়া ও গোলাম রব্বানীসহ আরও অনেকে।


পনেরো দিনের ট্রেনিং শেষে তারা রামগড়ে ফিরে এসে মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অবস্থান নেন। করেরহাট ব্রিজ ধ্বংসের অপারেশনে মীর মোজাফফর আহমদ সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।


মীর মোজাফফর আহমদ জানান, আসার পর এলাকায় সদস্য সংগ্রহ করে একটি গ্রুপ গঠন করি। তখন আমাদের গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন ফরহাদাবাদের ফজল আমীন মাস্টার। তিনি এয়ারফোর্সের সদস্য ছিলেন। রামগড় থেকে ফেরার সময় সামান্য কিছু গোলাবারুদ সঙ্গে এনেছিলাম। সেগুলো শেষ হয়ে গেলে ফজল আমীন মাস্টার এয়ারফোর্সের সদস্য হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র-শস্ত্র সংগ্রহ করতেন।


আমরা প্রথমে অবস্থান নিয়েছিলাম উদালিয়ার নূর আহমদ চৌধুরীর বাড়িতে। পরবর্তীতে হাজী আব্দুল হাদির খামার বাড়িতে আশ্রয় নিই।


আমরা মাহমুদুল আলমসহ এলাকায় সদস্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখি। সদস্যদের মধ্যে মেলেটারি আহমদ ছাফা, ডাক্তার আজিজুল হক, বি.কম ইসলাম এবং ছালে জহুর মাস্টার উল্লেখযোগ্য। তখন আমাদের লিডার ছিলেন মাস্টার ফজল আমীন।


ওখানে অবস্থানকালীন আমি চট্টগ্রাম শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ওষুধপত্র সংগ্রহ করতাম এবং আমাদের গ্রুপের খাদ্যদ্রব্যের ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করতাম।


একদিন ওষুধ সংগ্রহ করতে গিয়ে রাজাকার কমান্ডার ফজলের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। আটদিন কারাবন্দি থাকার পর প্রায় ৮০০ টাকা খরচ করে মুক্তি পান। এরপর প্রতিদিন থানায় হাজিরা দিতে বাধ্য করা হয়। তবুও যুদ্ধ পরিচালনায় তিনি দমে যাননি।


মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কাটিরহাট ধলই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের আগরতলায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা দেশে আনা হয়, সেখানেও তার নাম ছিল।


কিন্তু দীর্ঘ প্রবাস জীবন ও বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হন। একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করলেও স্থানীয় মহলের ঘুস-দাবি ও দলীয় রাজনীতির বলি হয়ে ন্যায্য সম্মান পাননি।


তিনি ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের চট্টগ্রাম মহানগরীর সক্রিয় সদস্য। তিনি কমান্ডার মাহমুদুল আলমের নেতৃত্বে ১নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধ শেষে কামাল সাহেবের হাতে অস্ত্র সমর্পন করেন।


তার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ব্যাপারে খোরশেদুল আলম চৌধুরী (লাল মুক্তি বার্তা নং ০২০৪০৩০৩০০), মীর আবুল বশর (ভারতীয় তালিকা নং ২০৯২২) এবং মো. নুরুল ইসলাম (লাল মুক্তিবার্তা নং ০২০৩০২১১৩) সত্যায়নও ছিল।


২০০৩ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনে উপজেলা পর্যায়ে কাগজপত্র সত্যায়িত হলেও ঘুস না দেওয়ায় তা গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৫ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের তৎকালীন উচ্চমান সহকারী শাহ আলমের নামে ৮ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন মীর মোজাফফর আহমদ।


তিনি বলেন, ‘আমি সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি, অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছি। অথচ শুধু বিএনপি করায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা যুদ্ধের মাঠে ছিল না, তারা ঘুস দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিচ্ছে। এটি লজ্জাজনক ও ইতিহাস বিকৃতি।’


এমন ঘটনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার উপর যে আঘাত এসেছে, তা আজও দুঃখজনক। প্রবীণ এই মুক্তিযোদ্ধার ন্যায্য স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে।

 


একুশে সংবাদ/ চ.প্র/এ.জে

Link copied!