গাজীপুরের শ্রীপুরে পুলিশ সদস্য কনস্টেবল কমল দাসকে অটোরিকশায় ঝুলিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় এক কিলোমিটার নিয়ে গেছে চালক জনি আহমেদ (২৪)। পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে নেয়ার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ চালকসহ অটোরিকশা আটক করেছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আটক অটোরিকশা চালক জনি আহমেদ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি গ্রামের আহমেদ আলীর ছেলে। পুলিশ সদস্য কমল দাস মাওনা হাইওয়ে থানায় কর্মরত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় একজন পুলিশ সদস্য চলন্ত অটোরিকশার রড ধরে ডান পাশে ঝুলে আছেন। পেছনে কয়েকজন যাত্রী চালককে অনুরোধ করছেন অটোরিকশা থামানোর জন্য। কিন্তু, চালক রিকশা থামাচ্ছেন না। মহাসড়ক দিযে চলাচল করায় অটোরিকশাকে ওভারটেক করে আসা-যাওয়া করছে বিভিন্ন পরিবহন। পরে মহাসড়কের একটি স্থানে জ্যাম লেগে থাকলে স্থানীয় জনতা ও পুলিশ সদস্য মিলে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জামিরদিয়া এলাকায় চালককে আটক করে মারধর করতে দেখা যায়।
শ্রীপুরের গাজী টেলিভিশনের প্রতিনিধি মোতাহার খান তার ফেবসুক পোস্টে ওই ভিডিও পোস্ট করে লিখেন অটোতে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজকে অবৈধ অটোরিকশা মহাসড়কে চলছে। এর দায় কার! মান্থলি (মাসিক) গ্রহণ করে মহাসড়কে নিষিদ্ধ অটো চলতে দেওয়াই আজকে পুলিশ নিজেই ভুক্তভোগী। এখনো কি নিষিদ্ধ হবে না অটো রিকশা! এখনো কি হবে না আপনাদের হুশ!
ওই গণমাধ্যম কর্মীর পোস্টে মন্তব্য হাবিব সোহাগ লিখেন পুলিশের বাড়তি ইনকাম সোর্স বন্ধ করা যাবে না। জহিরুল ইসলাম জনি লিখেছেন গাজীপুর-ময়মনসিংহ পুরো মহাসড়কেই অটোরিকশার ছড়াছড়ি। কেউ কেউ মন্তব্য করেন টাকা দিলে রাস্তা ক্লিয়ার, অটোরিকশা বেপরোয়া এদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি, অটোরিকশা জন্য রাস্তায় জ্যাম লেগেই থাকে, অটোরিকশা কি নিষিদ্ধ করা হোক।
সাংবাদিক সুমন গাজী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অটোচালকের কৃতকর্মের যে ভয়াবহ চিত্র দেখলাম। শরীরটা কাঁপছে। একজন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যকে প্রায় এক কিলোমিটার ঝুলিয়ে নিলো। পুলিশ ভাইটা কান্না করছিলো। থামানোর অনুনয়-বিনয় করছিলো। অটোতে থাকা এক যাত্রীকেও দেখলাম থামানোর অনুরোধ জানাতে। অথচ বদমাইশটা গতি আরো বাড়াচ্ছিলো। যে কোনো মূহুর্তেই পুলিশ ভাইটার অপমৃত্যু হতে পারতো। ওই অটোচালক কতোটা বীভৎস চরিত্রের অধিকারী। সাক্ষাৎ জল্লাদ। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী রাখছি।
ওই গণমাধ্যম কর্মীর পোস্টে মন্তব্য এম এ হামিদ লিখেন, একটা বিষয় মাথায় আসে না, সব অটো রিকশা পুলিশ ধরে না কেন? ওদের কি লাইসেন্স রিনিউ করা আছে নাকি?
পুলিশ কনস্টেবল কমল দাস বলেন, তিনি বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসময় মহাসড়কে চলাচল নিষেধ থাকা স্বত্তে¡ও একটি একটি আটো রিকাশা যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। ওই অটো রিকশাকে থামানো জন্য সংকেত দিলে চালক আটো রিকাশা থামায়। এসময় চাবি নেওয়ার চেষ্টা করলে চালক জনি আহমেদ রিকশা নিয়ে যেতে থাকে। এসময় আমি উঠে চেষ্টা করলে অটোরিকশার ডান পাশে ঝুলে যায়। এসময় চালককে রিকশা থামানোর জন্য বললে সে দ্রæত গতিতে রিকশা চালিয়ে যেতে থাকে। আমিসহ রিকশায় থাকা যাত্রীরা তাকে রিকশা থামানোর জন্য বললে সে না থামিয়ে রিকশার গতি বাড়িয়ে দিয়ে দ্রæত এক কিলোমিটার নিয়ে যায়। চালকের উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে চাপা দিয়ে হলেও অটোরিকশা নিয়ে সে পালিয়ে যাবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি তাকে আটক করি। হয়তোবা ঘটনার সময় রিকশায় থাকা যাত্রী ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছেড়ে দিতে পারে।
মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, কনস্টেবল কমল দাস অটোটা আটকানোর চেষ্টা করছিল। পরে অটো টান দিলে সে আবার অটোতে উঠে পড়লে অটো না থামিায়ে অটো ছেড়ে দেয়। পরে এক কিলো মিটার যাওয়ার পর জ্যাম থাকায় অটোটা আটকানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :