ঘর নেই-জমি নেই অন্যের জমিতে পলিথিনের ছাউনির ছোট কুটিরে অতিকষ্টে বসবাস করছেন অসহায় বৃদ্ধ আবুবক্কর দম্পতি।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রতাপ গ্রামের মৃত অকিম উদ্দিনের ছেলে অসহায় ভুমিহীন বৃদ্ধ আবুবক্করের বয়স প্রায় ৮০ বছর ছুঁই ছুঁই। তিনি পেশায় একজন চাউল কল চালক ছিলেন। এলাকায় তাকে সবাই বক্কর মিস্ত্রি বলে চেনেন।
আবুবক্করের ১ ছেলে ৪ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এক সময় সুখের সংসার ছিল। পরে তার আয় উপার্জন অনেকটা কমে যাওয়ায় চরম আর্থিক দৈন্যতায় পড়েন তিনি। ছেলে মেয়েদের লালন পালন আর বিয়ে দিতে পৈত্রিকসু্ত্রে প্রাপ্ত বসতভিটা টুকু বিক্রি করে একেবারে নিঃস্ব হন আবুবক্কর। পেটের দায়ে দীর্ঘদিন পরিবার পরিজন নিয়ে আবুবক্কর ঢাকা ও চট্রগ্রামে ছিলেন। অসুস্থতায় তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।
বর্তমানে তিনি প্রতাপ সেনপাড়া কালি মন্দির সংলগ্ন জনৈক ব্যক্তির জমির ওপর ছোট একটি পলিথিনের জীর্ণশীর্ন বাশবাতি আর ভাঙা টিনের বেড়া পলিথিনের ছাউনি ঘরে একমাত্র ছেলে আমিনুল ইসলাম ও স্ত্রী জবা বেগমসহ নাতি নাতনিদের নিয়ে কোন রকমে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছেন।
এ পরিস্থিতিতে আকাশ একটু মেঘলা হলে কিংবা একটু ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলেই ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করে স্ত্রী নাতি নাতনীদের নিয়ে আশে পাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। এভাবে প্রায়ই এই দম্পতির আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে। বৃদ্ধ আবুবক্করের শরীরে এখন নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধায় কঙ্কালসার হয়ে পড়ছেন তিনি। এখন সে কোন উপার্জন করতে পারেন না। অভাব অনাটনের সংসারে চিকিৎসা ও ঔষুধ কেনার তার কোন সামর্থ নেই। বর্তমানে তাদের ওই বসত ঘরেই চা পান বিক্রি করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কখনো বেচাকেনা না হলে তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝির কাজ করে থাকেন। এভাবেই কোন রকম ভাবে অর্ধাহারে অনাহারে দিন যায় এই বৃদ্ধ দম্পতির।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও তেমন কোন সহযোগিতা পায়না অসহায় পরিবারটি । ফলে অভাব অনাটন তাদের এখন নিত্য দিনের সঙ্গী। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারটির আকুতি বর্তমান সরকার অনেককেই জমি ও ঘর বাড়ি করে দিলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি এমন সহায়তা।ভুক্তভোগি বৃদ্ধ দস্পতির বুকভরা আশা সরকার যদি আমাদের মাথা গোঁজার মত একটু ঠাঁই করে দিতো তাহলে অন্তত একটু আড়ামে ঘুমাইতে পারতাম।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/DCPkOUSXZG0bSzEhfv2o/images/83ed71f660cb967f496d1a931837d14f6532f6524a796878.jpg)
আবুবক্করের স্ত্রী জবা বেগম বলেন, ‘একনা ঘরের জন্য কতজনাক অনুরোধ কছুনু কেউ হামার কথা শোনে না। বৃদ্ধ আবুবক্কর ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে বলেন, ‘এই বয়সে কোটে যাই। কাজকর্ম করবার পাইনা। টেকার অভাবে চাউল ডাইল কিনবার পারিনা আরো ওষুধ কিনি কোটে থাকি। কোন কোন দিন খায়া না খায়া উপাসে দিন যায়। তারপরে খাই, না খাই, কেউ যদি একনা ঘর বাড়ি করি দিলও হয় তাতে আত্নাটা একনা শান্তি পাইলো হয়।’
নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের ঘর দেয়ার কোন এখতিয়ার নেই। তবে অন্যান্যে সুযোগ সুবিধাগুলো দেয়া হবে। আর ঘরবাড়ির বিষয়ে ইউএনও,র সাথে কথা বলে যদি কিছু একটা করা যায় বলে এমন আশ্বাস দেন তিনি।’
ওই গ্রামের দিলীপ চন্দ্র, হারুন মিয়া ও ছানারুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘একসময় বক্কর মিয়ার সাংসারিক আয় অবস্থা ভাল ছিল। অসুস্থতা আর ছেলে মেয়েদের লালন পালন আর বিয়ে সাদী দিতে নি:স্ব হয়ে পড়েন আবুবক্কর। তার শারীরিক অবস্থাও খুব ভাল নয়।’
অর্থাভাবে তেমন চিকিৎসা করতে না পেরে জোরাতালির বসত ঘরেই রোগ যন্ত্রনায় ধুঁকে ধুঁকে রাত কাটছে আবুবক্করের। তিনি এখন প্রায় মৃত্যুশয্যায়। বর্তমান সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অনেক অসহায় মানুষকে ঘরবাড়ি নির্মান করে দিচ্ছে। আমরা এলাকাবাসি অসহায় এই দম্পতিকে কিছু না হলে অন্তত একটা বসতভিটার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :