AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন পরিবারের কেউই বেঁচে নেই


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি,লালমনিরহাট
০২:২১ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪
জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন পরিবারের কেউই বেঁচে নেই

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয় ২৩ বছরে। রেখা খাতুনের জীবনের মেয়াদ থমকে যায় তার আগেই। মা-বাবা আপন ভাই-বোনসহ ২৫ আত্মীয় মারা যায়। ঘরবাড়ি জমি ধরলা নদীর গ্রাসে বিলীন হয়ে যায়। স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে নিরুদ্দেশ। যাবজ্জীবনের পরেও জীবনের ঠিকানা খুঁজে পায় রেখা খাতুন। ২৩ বছর পরে জেল থেকে বেরিয়ে মুক্ত আলোয় পা রাখেন তিনি। জীবন নদীর পারে সাহারা মরুর লুহাওয়া তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় গভীর অমানিশার আঁধারে।

শিশু ধর্ষণ মামলায় রেখা খাতুন (৪৪) গ্রেফতার হন ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর। ধর্ষণে জড়িত দুই আসামিকে সহযোগিতা করার অপরাধে তাকে মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল। ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেখা খাতুনসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২৩ বছর সাজা ভোগের পর রেখার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপরও জরিমানার এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে আরও তিন বছর কারাগারে আটক থাকতে হতো। সেই হিসাবে তাকে ২০২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলা কারাগারে থাকতে হতো। বিষয়টি জানতে পেরে রেখা খাতুনের মুক্তির জন্য এগিয়ে আসেন লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন। তারা সম্মিলিতভাবে জরিমানার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে দেন। এর ফলে ঈদের দুই দিন আগে সকালে রেখা খাতুনকে লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

বের হয়ে জানতে রেখা খাতনে জানতে পারেন বাবা, মা, দুই বোন, এক ভাইয়ের কেউই আর বেঁচে নেই। শুধু তাই নয়, স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে নিরুদ্দেশ, বাবার ভিটেমাটিও বিলীন হয়েছে ধরলা নদীর গর্ভে। রেখা খাতুনের বাবার বাড়ি ছিল লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের কলাখাওয়া ঘাট গ্রামে। লালমনিরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার ওমর ফারুক জানান, রেখা খাতুন একজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি ২৩ বছর ৪মাস ৫দিন লালমনিরহাট জেলে কাটিয়েছেন। একটি ধর্ষণের ঘটনায় সহযোগিতা করার অপরাধে তিনি ২৩ বছর আগে গ্রেফতার হয়ে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে যান। এরপর ওই মামলায় রেখা খাতুনসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। তবে রেখা খাতুন জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় তার আরও তিন বছর কারাভোগ করতে হতো। তিনি মুক্তি পাবার আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বাইরে অতিরিক্ত আরও চার মাস ছয় দিন কারাভোগ করেছেন। কারাগারে রেখা খাতুনকে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি হস্তশিল্পের কাজ করে উপার্জন করতে পারবেন।

নিজের জীবন সম্পর্কে রেখা খাতুন বলেন, দারিদ্র্যের কারণে তার বিয়ে হয় ১৩-১৪ বছর বয়সে। স্বামী কোরবান আলী তখন ৩৪ বছরের টগবগে যুবক। পেশায় দিনমজুর ছিলেন কোরবান আলী। বিয়ের পরও দুই-তিন বছর বাবার বাড়িতে তারপর ১৯৯৮ সাল থেকে স্বামীর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। রেখা ও তার স্বামী কোরবান আলী লালমনিরহাট শহরের খোচাবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

তিনি আরও জানান, ১৫ বছর আগে রেখার বাবা ফজলু রহমান মারা যান। আর মা নূরনাহার বেগম মারা যান ১২ বছর আগে। তাদের কবরও গ্রামের বাড়িতে হয়নি। পাশের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কবির মামুদ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ওই গ্রামে রেখার ছোট বোন টুম্পা বেগমের বিয়ে হয়েছে। কারামুক্তির পর টুম্পার শ্বশুরবাড়িতেই রেখা আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন।

কারাগারের আগের ও পরের জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে রেখা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি জেলে থাকার সময় আমার মা, বাবা, দুই বোন আর এক ভাইসহ আমার ২৫ আত্মীয় মারা গেছেন। আমি জেলে যাওয়ার পর আমার স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে এখন কোথায় আছে, কেউ বলতে পারে না।’রেখা আরও বলেন, ‘আমার বাবার বাড়িটা ধরলা নদীতে গেছে। স্বামীর অবর্তমানে বাবার বাড়িতে জীবনের বাকি দিনগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার স্বপ্নটাও ভেঙে গেছে।’

২০০০ সালের ৫ নভেম্বর শিশু ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হন রেখা। ধর্ষণে জড়িত দুই আসামিকে সহযোগিতা করার অপরাধে তাকে মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল। ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেখা খাতুনসহ তিন আসামি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হন। তবে রেখা খাতুন দাবি করেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। এ মামলার অপর দুই আসামিকে আমি চিনি না। পরে জানতে পারি, তারা আমার স্বামীকে চেনেন।’

দণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি লালমনিরহাট শহরের নর্থ বেঙ্গল মোড় এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন ও লালমনিরহাট শহরের কুড়াটারি গ্রামের ভোলা মিয়ার ছেলে ফরিদ হোসেন। রায় ঘোষণার সময় ফরিদ হোসেন পলাতক ছিলেন। পরে গ্রেফতার হন। ওই দুই আসামি চার-পাঁচ বছর জেল খেটে উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। এর মধ্যে আলমগীর হোসেন দাম্পত্য কলহের জের ধরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ফরিদ হোসেন লালমনিরহাট শহরের একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করেন।

 

একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা 
 

Link copied!