গাজীপুর জেলা সহ নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা এর আশপাশ দিয়ে বেশ কিছু নদীর সীমানা রয়েছে। এক সময় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা ও কাপাসিয়া সিমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষা নদী ছিল কৃষকের চোখের মনি, জেলেদের জীবিকার অবলম্বন, পথিকের পথ, বণিকের অবলম্বন, পালতোলা নৌকার সারি ঘুরে বেড়াতো নদীর বুকে। মাঝিরা গুণ টেনে এগিয়ে যেতে ভাটিয়ালি সুরে। মাছের সমৃদ্ধি ছিল নদীতে। রুই,কাতলা, কালাবাউশ, গুতুম, বোয়াল, আইর, পুঁটি, ছোট চিংড়ি, বড় চিংড়ি, শইল, চাপিলা, বাইরা মাছ। শীতলক্ষ্যার রূপালী চাপিলা বিখ্যাত ছিল। নদীর তীরবর্তী শ্রীপুরের বরমী, কাওরাইদ ও কাপাসিয়ার সিংহশ্রী বাজারে এ মাছ বিক্রি করা হতো।
শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন,প্রজেক্টের মাছ,নদীর মাছ বলে বিক্রি করছি।নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে পানির উপরে ভেসে উঠতে দেখা যায়। এই এলাকার অনেক জেলে বংশানুক্রমে পেশা ছেড়ে রিকশা চালানো, ইট ভাটার কাজ, মাটিকাটার কাজ, চা বিক্রয়ের কাজসহ নানাবিধ পেশায় ঢুকে পড়েছে।
মাছ বিক্রেতা সঞ্জিত বাবু এখন চা বিক্রেতা। কাপাসিয়া উপজেলার বাঘিয়া গ্রামের সতিষ বাবুর ছেলে। গত তিন চার বছর ধরে নদীর তীরবর্তী নারায়নপুর বাজারে চা বিক্রি করেন।
সঞ্জিত বাবু বলেন, আমি, আমার বাবা শীতলক্ষ্যা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছি।এখন নদীতে মাছ না থাকায় আমার মতো অনেকেই মাছ ধরা ও বিক্রির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।আমার বাবা কৃষি কাজ করেন।আমার দাদা অখিল বাবু চেপা শুটকি বিক্রির কাজ করেন।
সঞ্জিত বাবুর দাদা শুটকি বিক্রেতা অখিল বাবু বলেন,পাঁচ বছর আগে আমি নদী থেকে মাছ ধরে শুটকি বানানোর কাজ করেছি।এখন মাছ না থাকায় শুটকি বানাতে পারিনা।শুটকি কিনে এনে বিক্রি করি।কারখানার দূষিত পানির কারণে এই নদীতে এখন মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.আশরাফুল্লাহ জানান, প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে নদী দূষণ। ভালুকা থেকে আসা কলকারখানার দূষিত ময়লা আবর্জনা শ্রীপুরের বরমী এলাকা মাটিকাটা নদী ও সুতিয়া নদী হয়ে এসে শীতলক্ষ্যার পানি কালো হয়ে গেছে।এতে নদীতে মাছসহ জলজ প্রাণী প্রায় ধ্বংসের পথে।
তিনি বলেন, অবৈধ মাছ আহরণে মৎস্য অধিদপ্তর আইনে এ অর্থ বছর ২০টি অভিযান ও ৫ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে ও অবৈধ জাল আটক করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুরের উপ পরিচালক নয়ন মিয়া বলেন,নদী রক্ষায় শিল্প মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে।এ ছাড়া দূষণকারী শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় জনশ্রুতিতে জানা যায়,বাংলাদেশের এককালীন বিখ্যাত মসলিন শিল্প শীতলক্ষা নদীর উভয় তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে বাংলাদেশের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী যার গতিপথের প্রধান স্তর গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক নামক স্থান থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে এবং বরমী নামক স্থান থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে কাপাসিয়া অভিমুখে নারায়ণগঞ্জের পূর্ব দিয়ে কালা গাছিয়ার কাছে নদীর সাথে গিয়ে মিশেছে।শীতলক্ষ্যা নদীটির দৈর্ঘ্য ১১০ কিলোমিটার,প্রস্থ প্রায় ২২৮ মিটার।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :