AB Bank
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কাজে আসছে না ১৩ কোটি টাকার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পৌরবাসী


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
০৭:৩৮ পিএম, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩
কাজে আসছে না ১৩ কোটি টাকার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পৌরবাসী

কাগজে-কলমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। তবে করোনাকালীন পরিস্থিতির কারনে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১ বছর পর শেষ হয় নির্মাণকাজ। প্রস্তুত হয়ে পড়ে থাকলেও কোন কাজেই আসছে না আধুনিক ও পরিবেশ সম্মত উপায়ে দৈনিক ২৩ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল। বর্তমানে পৌরসভার সকল বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে পৌর এলাকার নয়াগোলায় পুলিশ লাইন্সের বিপরীতে খোলা জায়গায়। সেখান থেকে আবাসিক এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় নির্মাণের তিন বছর পরেও কাজে আসছে না প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হওয়া স্যানিটারি ল্যান্ডফিল। ঘনবসতি থাকা খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর পৌরসভার সকল গৃহস্থালি বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে পৌরবাসী। স্থানীয়দের হাজারো বাধা ও অভিযোগ স্বত্বেও আবাসিক এলাকায় ফেলা হচ্ছে এসব বর্জ্য। এর ফলে নানারকম রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা চিকিৎসকদের।

 

নয়াগোলার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি সরকারি প্রকল্প হয়েছে। তাই এখানে খোলা জায়গায় আর ময়লা ফেলা হবে না। কিন্তু শুধু শুনেই আসছি এটা। পুরো পৌরসভার যতগুলো ময়লা আর্বজনা হয়, প্রতিদিন তা জমা করে এখানে আবাসিক এলাকায় এনে ফেলা হয়। বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি।

 

একই এলাকার রিকসা চালক আজিজুল হক বলেন, ময়লা ফেলার জায়গার সামনে দিয়ে যাওয়ার আধা কিলোমিটার এলাকায় গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। এসময় নাক ঢেকে যেতে হয়। যাত্রীদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। একটু বৃষ্টি হলেই গন্ধ তীব্র আকার ধারন করে। এখানে বসবাস করায় মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমাদের দাবি, বর্জ্যগুলো এমন আবাসিক এলাকায় এমন ময়লা-আর্বজনা না ফেলে শহরের বাইরে ফেলা হোক। এতে পৌরবাসী স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।

 

গৃহবধূ সায়েমা খাতুন জানান, স্বাভাবিক সময়ে তো দুর্গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই তা চরমে পৌঁছায়। এমনকি বাসার পাশে হওয়ার সুবাদে ছেলে-মেয়েরা ঘনঘন নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এতে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কায় পড়েছি। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।

 

জেলা শহরের দ্বারিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা আহমেদ আলী বলেন, স্যানিটারি ল্যান্ডফিলটি অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা আছে। কিন্তু এখানে কোন কার্যক্রম নেই। তাহলে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এমন ল্যান্ডফিল কেন করা হলো তা বোধগম্য নয়। কি দরকার ছিল কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এভাবে ফেলে রাখার।

 

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল প্রস্তুত থাকলেও কাজে আসছে বলে স্বীকার করেন এর তত্বাবধায়ক মো. ওয়াসিম। তিনি জানান, প্রায় ২ বছর ধরে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও এখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলা হয়না। আপাতত নয়াগোলায় খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে পৌরসভার সকল বর্জ্য। কবে নাগাদ এখানকার কার্যক্রম শুরু হবে তাও জানি না।

 

খোলা জায়গায় ময়লা-আর্বজনা ফেলায় পরিবেশ দূষনের কথা স্বীকার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ মোহা. ইমরান হোসাইন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটর কারনে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলটি পুরোপুরি চালু করা যায়নি। তবে বর্তমানে সেখানে পৌরসভার মধ্যে থাকা মনুষ্যবর্জ্য ফেলার কাজ চলছে। তবে বিভিন্ন ময়লা আর্বজনা ফেলার কার্যক্রম করার আগে প্রয়োজন পৌরবাসীর জনসচেতনতা তৈরি। এলক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা। আশা করি, খুব শীগ্রই পৌরসভার ল্যান্ডফিলটির কার্যক্রম শুরু হবে।

 

খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলায় ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত নানান রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলার কারনে তার আশেপাশে বসবাস করা মানুষরা ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগবালাই ঝড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তীব্র। অন্যদিকে, অন্যান্য বর্জ্যের পাশাপাশি সেখানে মেডিকেল বর্জ্য থাকলে তা আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে জানান তিনি।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. সালেহ্ উদ্দীন বলেন, আমাদের লোকবল ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সংকট রয়েছে। পাশাপাশি পৌরবাসীর মাঝে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য বসতবাড়ি থেকেই আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলার বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রধানত এই দুই কারণে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল চালু করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। বর্জ্য আলাদা করে ফেলতে বাড়িতে বাড়িতে আধুনিক ডাস্টবিন প্রদান ও জনসচেতনতা তৈরিতে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার আধুনিক ও বর্জ্য পৃথক রাখার ডাস্টবিন প্রদান করা হয়েছে পৌরবাসীর মাঝে।

 

উল্লেখ্য, প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার জনসংখ্যার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় দৈনিক ৫০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণকাজে মোট ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ২৩৫ টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় ল্যান্ডফিল নির্মাণকাজ শেষ হয় ।

 

একুশে সংবাদ/আ.ও.প্র/জাহা

Link copied!