AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এক পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধী, দিন চলে ভিক্ষা করে



এক পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধী, দিন চলে ভিক্ষা করে

মায়ের কোলে ছিলেন ছোট্ট সুরুজ, হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যান মা। আছড়ে পড়ে কোলের শিশুটিও। ঘটনার দিন রাতেই কয়েক মাস বয়সী শিশু সুরুজের গায়ে তীব্র জ্বর আসে। কয়েকদিন জ্বরে ভুগার পর প্রথমে বাঁ পায়ের চলনশক্তি নষ্ট হয়। ধীরে ধীরে দুটি পা অকেজো হয়ে যায়।

 

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে ওঠা সুরুজ আলীর বয়স এখন ৬২ বছর। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে এবং দুই নাতী নাতনী তারাও জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। হতদরিদ্র পরিবারটির বসবাস করছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যুগীরছিট গ্রামে। সুরুজ আলীর মা রোমেলা খাতুনের সেই পড়ে যাওয়ার ঘটনা পরিবারে প্রতিবন্ধিত্বের অভিশাপ বলে মনে করেন তারা। বর্তমানে তাদের দিন চলে ভিক্ষা করে।

 

৮১ বছর বয়সী সুরুজ আলীর মা রোমেলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে সুরুজ জন্মের কিছুদিন পর বেড়াতে যাচ্ছিলাম। পথে সে কোল থেকে পড়ে যায়। রাতে ছেলের গায়ে জ্বর চলে আসে। ওই জ্বরের পর দুই পা অচল হয়ে যায়। ডাক্তার—কবিরাজ দেখিয়েও সুস্থ করে তুলতে পারিনি।

 

সুরুজ মিয়া বলেন, দুর্ঘটনায় মায়ের কোল থেকে পড়ে গিয়ে এ অবস্থা। আমার অন্য ভাই—বোনেরা ভালো। কেবল আমিই এমন অবস্থার শিকার। দশজনের কাছ থেকে চেয়ে খেতে হয়। ৯০ দিন পর পর চারজন প্রতিবন্ধী সদস্য ১০ হাজার টাকা ভাতা পাই। আর মানুষের কাছে চেয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালাই।

 

সুরুজ মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়াও (৩৫) শারীরিক প্রতিবন্ধিত্বের শিকার। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারে ছয়জন প্রতিবন্ধী। একবেলা খেতে পেলে আরেক বেলা জোটে না। আমি বিভিন্ন বাজারে গিয়ে মানুষের কাছে চেয়ে ভিক্ষা করে যা উপার্যন করি তাই দিয়ে সংসারের খরচ চালাই এভাবেই চলছে আমাদের দিনকাল। সমাজে অনেক বড় বড় ধনী ধনী মানুষ আছে তারা যদি আমাকে একটা চা পানের দোকানের ছোট একটা দোকান দিয়ে দিত তাহলে আর আমার ভিক্ষা করতে হতোনা।

 

সেলিমের বোন পারভীন (৩০) তিনিও শারীরিক প্রতিবন্ধি। তিনি বলেন, পায়ের সমস্যায় শারীরিক প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করতেই বিয়ে হয়ে যায়। সবকিছু ঠিকঠাক, কেবল পা দুটোই অচল।

 

সুরুজ মিয়ার আরেক মেয়ে জেসমিনও (২৪) তিনিও শারীরিক প্রতিবন্ধি। তিনি বলেন, একবেলা খেলে দুই বেলা খেতে সমস্যা হয়। তিন মাস পর পর আড়াই হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি। এ পর্যন্ত দুইবার পেয়েছি। এই দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বর্তমানে জিনিস পত্রে যে দাম এই টাকায় কিছুই চলেনা মরে গেলেই ভালো হতো।

 

প্রতিবেশী জসীম উদ্দিন বলেন,সুরুজের পরিবারের ৬জন শারীরিক প্রতিবন্ধি, ওরা হাঁটতে পারে না। খুব কষ্ট করে ছেলে—মেয়েরা বেড়ে উঠেছে। এখন কষ্ট করেই জীবিকা নির্বাহ করছে।

 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের আইএমও ডা. মো: মামুনুর রহমান জানান, এটি বংশ পরষ্পরায় জিনগত সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সুরুজ মিয়া ছোট সময় তার মায়ের কোল থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি একটি ঘটনা। তবে জিনগত সম্যার কারণেই এরকম হয়ে থাকে।

 

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মমিনুল কাদের (মোমিন) বলেন, পরিষদের পক্ষ থেকে এ বছর তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে তারা ‘সুবর্ণা‍‍` কার্ডে ভাতা পেত। সেই ভাতা অবশ্য অনেক কম। এলাকাবাসি হিসেবে নিজের সাদ্ধমতো চেষ্টা করি পাশে থেকে যতটুকু সম্ভব হয় সহযোগিতা করার জন্য।

 

শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।

 

একুশে সংবাদ/ট.সা.প্র/জাহা

 

Link copied!