বরগুনার আমতলীতে লাম্বি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। রোগটিকে অনেক খামারি বসন্ত বলেও ধারণা করছেন। মারাত্মক এ রোগটিকে প্রতিরোধে গ্রাম্য পশু চিকিৎসকরা গাঁট পক্স ভ্যাকসিন দিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না।
রোগটি মশা বা মাছির মাধ্যমে আক্রান্ত পশু থেকে সুস্থ পশুর কাছে ছড়াচ্ছে। এর সঠিক ভ্যাকসিন না থাকায় বিপাকে গ্রামীণ খামারিরা। সঠিক চিকিৎসা না পেলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে খামারিরা। ক্ষুরা রোগের চেয়েও লাম্বি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভয়ঙ্কর রোগ।
জানা গেছে, গবাদি পশুর নতুন একটি রোগ লাম্বি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। ভাইরাসজনিত এ রোগটি ২০১৯ সালের দিকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রোগটি বর্তমানে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে অনেক খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে, লাম্বি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি গরুর এক ধরনের চর্মরোগ। বিভিন্ন কীটপতঙ্গের মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। আবার আক্রান্ত গরুর লালা খাবারে মিশে এবং খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়চোপড়ের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গাভির দুধে এই ভাইরাস বিদ্যমান। তাই আক্রান্ত গাভির দুধ বাছুর খেলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গ্রামীণ পশু চিকিৎসকরা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের লক্ষণ হলো জ্বর। পরে ত্বকের ওপরে ব মাপের ফোড়া বা গোটা তৈরি হয়। মানুষের জলবসন্ত হলে যেমন হয়, এটা অনেকটা তেমনই। গরুর সমস্ত শরীরে গোটা তৈরি হতে থাকে। এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এমন ক্ষেত্রে গরুর মৃত্যুর হার বেশী। আক্রান্ত গরুর পা ও অণ্ডকোষ ফুলে যায়। আবার কিছু কিছু গরুর গলায় ঘা হয় এবং গরুর চামড়ার নিচে পচন ধরে। রোগটি এমনই মারাত্মক সঠিক চিকিৎসা না পেলে আক্রান্ত গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক গরুর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ে। এতে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। আবার গর্ভবতী গাভির ক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভবনা থকে।
উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ গ্রামের মো. ইমরান খা বলেন, আমার একটি বাছুর গরুর সমস্ত শরীরে গোটার মতো ওঠে। কিছুদিন পরে গোটাগুলো থেকে গর্ত হতে শুরু করে। একপর্যায়ে সমস্ত শরীরের পশম পড়ে যায়। দেখতে খুব ভয়ঙ্কর লাগে এবং গন্ধে কেউ কাছে যেতে পারতো না। বাছুর গরুটির কষ্ট ও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে জবাই করে মাটি চাপা দিয়ে দেই।
একই গ্রামের মজনু গাজী, গরুগুলো গরম আসার পরেই প্রথমে গোটা ওঠে। পরবর্তীতে গলা ফুলে যায়, মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কোন কিছু খেতেই পারছে না। সঠিক চিকিৎসা না থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হক বলেন, সরকারী ভাবে এ রোগের কোন প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি। তবে বেসরকারী কিছু কোম্পানী প্রতিষেধক বের করেছে আক্রান্ত গরুকে সে সকল প্রতিষেধক ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/সা.খ.প্র/জাহা