মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস এবং ড্রাইভার সংকটে পরিবহন সেবা পেতে প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।পযাপ্ত সংখ্যক বাস না থাকায় প্রতিনিয়তই আসনের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলছে বাসগুলো।সিট না পেয়ে অনেকেই গাদাগাদি করে বাসে দাঁড়িয়ে, ঝুলে ঝুলে ঝুকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছে।অনেক সময় বাসে বিন্দুমাত্র জায়গা না থাকায় অটোতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছেন শিক্ষার্থীরা।
ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলেন,"ভার্সিটি থেকে দূরে থাকায় যাতায়াতের জন্য সবসময়ই বাসের প্রয়োজন হয়।প্রায় সময়ই বাসে ঝুলে ঝুলে বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করতে হয়।বাসে জায়গা না থাকায় অটোতে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়।আমি মনে করি আমাদের দুই তলা বিশিষ্ট বাস দরকার।সব ভার্টিসিটিতেই এ ধরণের বাস থাকলেও দুঃখজনক ভাবে আমাদের ভার্সিটিতে নেই।"
অপর এক শিক্ষার্থী আপন কর্মকার বলেন,"প্রত্যেকদিন এতো এতো স্টুডেন্ট পরিবহণ ব্যবস্থার ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, বাসে এতো চাপ সৃষ্টি করে যাতায়াত করছে, কোনো এক দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভারটা কে নেবে! পরিবহণ ব্যবস্থার কথা বললে,ড্রাইবার সংকট, বাসে পর্যাপ্ত সিট নেই শিক্ষার্থী অনুপাতে। প্রসাশনকে বলতে চাই আমাদের ভোগান্তির একটা সমাধান করুন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এটাই প্রত্যাশা আমাদের।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের।বাসে অতিরিক্ত ভীড়ে ঠেলে উঠতে বা দাঁড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না অনেকের জন্য।অপরদিকে অটোতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে অপরদিকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে হচ্ছে।
জানতে চাইলে গণিত বিভাগের নারী শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বলেন,"সম্প্রতি বাস সংকট একটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অত্যন্ত কষ্টকর এবং নিরাপত্তাজনিত দিক থেকেও উদ্বেগজনক। অনেক সময় দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও থাকে না—বাসের ভেতরে এতটাই ভিড় হয় যে, পেছনের দিকের শিক্ষার্থীরা নামতে চাইলে ধাক্কাধাক্কির মাধ্যমে নামতে হয়। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অস্বস্তিকর আচরণ বা অপ্রত্যাশিত শারীরিক সংস্পর্শের ঘটনা ঘটে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অগ্রহণযোগ্য।"এসময় তিনি নতুন বাস সংযোজন এবং শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুয়ায়ী অতিরিক্ত বাস সার্ভিস চালু করার দাবি জানান।
প্রসাশন সূত্রে জানা যায় বর্তমানে ক্যাম্পাসে মোট ২৮ টি গাড়ি চলমান যার মধ্যে ৯ বাস শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ।তন্মধ্যে ১ টি বাস যান্ত্রিক ত্রুটি জনিত কারণে চলাচল বন্ধ আছে।২৮ টি গাড়ি চালানোর জন্য বর্তমানে ১৯ জন ড্রাইভার কর্মরত আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান বর্তমানে ড্রাইভার সংকট বাস চলাচলে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।সরকারে সর্বশেষ প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারী চাকুরিরত ১০ গ্রেডের কাউকে অভারটাইম দেয়া যাবে না।অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ১৯ জন ড্রাইভারের ১১ জনই ১০ গ্রেডের হওয়ায় তাদের দিয়ে অভারটাইম করানো যাচ্ছে না।ফলে বিকেল ৫ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বাস চালাতে ড্রাইভার সংকট চরমে।অপরদিকে নতুন ১০ জন ড্রাইভার এবং ১০ হেল্পারের চাহিদা গত ৪ বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জানিও আসলেও এখনো অনুমোদন হয় নি।ইউজিসির অনুমোদন ব্যতিত আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ড্রাইভার কিংবা হেল্পার নেয়ার এখতিয়ার নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা একটি বাস খুব শীঘ্রই মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে প্রসাশন।তবে ড্রাইভার সংকটে বাসটি চালানো সম্ভব হবে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

