পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমান্বয়ে (ইবি) কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা। গেল বছর যা একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও করোনার পর থেকে আকস্মিকভাবে তা কমতে শুরু করে। এরমধ্যে নানা জটিলতায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ না করেই চলে গেছেন।
এদিকে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনাগ্রহের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলাকেই দায়ী করছেন বর্তমানে অবস্থানরত বিদেশিরা। তারা বলছেন— শুধুমাত্র ভর্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় মুক্তির কারণে বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের আগ্রহের তালিকা থেকে উঠে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি পরবর্তী সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও সুবিধা উন্নত করতে পারলে বিদেশী শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া অতিদ্রুত ইবিতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও নেপাল, ভারত ও আফ্রিকার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের আগ্রহের তালিকায় ছিলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে স্কলারশিপ না থাকা, সেশনজট, শিক্ষকদের বাংলা মিডিয়ামে ক্লাস নেওয়া, যথারীতি ক্লাস না হওয়া এবং উন্নত ল্যাব না থাকায় শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। পাশাপাশি আবাসিক হলের নিম্নমান, ইন্টারনেট সমস্যা, নির্দিষ্ট অফিস-কর্মকর্তা না থাকা, আবাসিকে অতিরিক্ত ফি, আলাদা ডাইনিং না থাকা এবং আবাসিক টিউটর না থাকাকে অনাগ্রহের কারণ মনে করছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নেপালী শিক্ষার্থী দিলকাস রেইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে আমাদের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে প্রশাসনের কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। শিক্ষকরা বাংলায় ক্লাস নেয়, হলে খাবারে জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই এবং আবাসিক ও টিউশন ফি অনেক বেশি। আমরা এসব বিষয়ে অনেকবার প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন দিলেও প্রশাসন এসব সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন সূত্রে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএচডিতে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। ১৬-১৭ থেকে ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ৫৯ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে আকস্মিকভাবে কমতে শুরু করে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মাত্র ১০ জন বিদেশি ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ৭ জন, ২০১৮ সালে ২২ জন, ২০১৯ সালে ১৬ জন, ২০২০ সালে ১৪ জন, ২০২১ সালে ১ জন, ২০২২ সালে ৬ জন, ২০২৩ সালে ১ জন এবং ২০২৪ সালে ২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়নি কোনো শিক্ষার্থী। বিগত নয় বছরে ভর্তি হওয়া মোট ৬৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৮ জন বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম সাদৎ হোসেন বলেন, করোনার পরেই বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছে না। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির কিছুদিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও সুবিধা উন্নত হলে বিদেশী শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ইউজিসির নজর কম। এজন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। কিভাবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবো।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ইতোপূর্বে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমি অতিদ্রুতই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেল পুনর্গঠন করবো। আশা করছি, আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ তৈরি হবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

