ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুর থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সাজিদ আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। তার মৃত্যু অস্বাভাবিক দাবি করে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয় বিভিন্ন বিভাগের হাজারও শিক্ষার্থী।
এময় শিক্ষার্থীরা তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ভূয়া ভূয়া’ স্লোগান দেন। পরে পৌনে ১২টার দিকে প্রশাসন ভবনের দুপাশেই আটকে দিলে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তোপের মুখে পড়েন তারা। এসময় ৬ দিনের মধ্যে তদন্তের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা তা লিখিতভাবে জানানোর দাবি জানান। প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ স্থান ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা দুপুর দুইটার দিকে প্রধান ফটক আটকে দেন। এছাড়া ঘটনার তদন্ত নিয়ে প্রশাসনের টালবাহানার অভিযোগ এনে প্রশাসন ভবনের নাম কেটে দিয়ে ‘প্রহসন ভবন’ লিখে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। টানা সাড়ে ৫ ঘন্টা আন্দোলনের পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীদের দাবি প্রশাসন লিখিতভাবে মেনে নিলে প্রশাসন ভবন ও প্রধান ফটক ছেড়ে দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাজিদের মৃত্যুর তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট এবং ৬ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত রোড লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা এবং বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, নতুল হলের নাম সাজিদ আবদুল্লাহ নামকরণ সহ ১৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছেন।
এরআগে সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে সাজিদ আব্দুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে টর্চলাইট মিছিল করে শাখা ছাত্রশিবির। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদল। এদিকে ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, দেশের বাইরে থাকায় সরাসরি আমি উপস্থিত থাকতে না পারা আমার জন্য দুঃখজনক। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের তদন্ত কমিটি করে যতদ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন এবং শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী (দায়িত্বরত উপাচার্য) বলেন, ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজতে এবং তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার বিষয়ে কাজ চলছে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গেই আছি, তাদের জন্য কাজ করছি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।
একুশে সংবাদ/এ.জে