৯০০ বছরেরও পুরনো একটি গির্জা। আর গির্জার মধ্যে একটি লোহার দরজার পিছনে ঘুমিয়ে রয়েছে অসংখ্য রহস্য। যে রহস্য নিয়ে অনেক কাহিনি, অনেক সম্ভাবনার কথা শোনা যায়। কিন্তু প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন আজও সম্ভব হয়নি।
ওই লোহার দরজা খুললেই সঙ্কীর্ণ পাথুরে সিঁড়ি নীচে নেমে যায়। অন্ধকার, ভ্যাপসা গন্ধ যুক্ত সেই সঙ্কীর্ণ পথে কিছুটা এগলেই দেখতে পাওয়া যাবে পর পর কফিনে সাজিয়ে রাখা মৃতদেহ।
বছর ধরে সেগুলো গির্জার নীচে এ ভাবেই পড়ে থেকে মমি হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে একটি মমি আবার আপনার সঙ্গে হাত মেলাতেও রাজি!
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে রয়েছে সেন্ট মিচান গির্জা। গির্জার ভিত তৈরি হয়েছিল ১০৯৫ সালে। পরে ১৬৮৬ সালে সেটি পুনর্গঠিত হয়। গির্জা তৈরির পর থেকেই তার নীচে ভল্টে কফিনে বন্দি মৃতদেহ রাখা হত। কিন্তু কেন রাখা হত তার সঠিক তথ্য কারও জানা নেই।
তবে মৃতদেহগুলোতে পচন না ধরে মমি হয়ে সংরক্ষিত থাকার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল গির্জার নীচে চুনাপাথরের দেওয়াল। যার ফলে ভল্টের মধ্যের পরিবেশ সব সময় শুষ্ক থাকে।
মনে করা হয় ১৭, ১৮ এবং ১৯ শতকের কিছু প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদেরই মৃত্যুর পর ওই ভল্টে রাখা হত। তার মধ্যে যেমন রয়েছে ওই সময়ের প্রভাবশালী হ্যামিলটন পরিবারও।
এই ভল্টের মূল আকর্ষণ হল চারটি নির্দিষ্ট মমি। যাদের কফিনে কোনও ঢাকনা নেই। ভল্টে গেলেই উন্মুক্ত এই ৪ মমি দেখতে পাওয়া যাবে। এমনকি একটি মমিকে ছুঁয়েও দেখতে পারবেন।
পাশাপাশি সাজিয়ে রাখা মমিগুলোর একেবারে ডান দিকে রয়েছেন এক মহিলা। যার সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানা যায় না। মাঝের এর মমি ‘চোর’ হিসাবে পরিচিত। তার আবার হাত এবং দুই পায়ের পাতা নেই।
এমন কথিত রয়েছে যে, প্রথম জীবনে ওই ব্যক্তি চোর ছিলেন। তখন শাস্তি হিসাবে তার হাত-পা কেটে দেওয়া হয়। পরে তিনি সাধু হয়ে মানুষের উপকার করেছিলেন। সে কারণেই মৃত্যুর পর এই ভল্টে স্থান পান।
তার ঠিক পাশেই শায়িত রয়েছে এক বেঁটেখাটে মহিলার মমি। ওই মহিলাও নাকি সন্ন্যাসী ছিলেন। তবে ভল্টের তারকা হল ৮০০ বছরের পুরনো একটি মমি।
তাকে ক্রশবিদ্ধ ব্যক্তি বলেই জানেন স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকেরা। মনে করা হয় তিনি এক জন সৈন্য ছিলেন। যুদ্ধের সময়ই তাকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল। জীবিত অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৬ ফুট লম্বা ছিলেন তিনি।
পর্যটকেরা ভল্টে প্রবেশ করে ৮০০ বছরের পুরনো এই ক্রুশবিদ্ধ মমিকে ছুঁয়ে দেখতে পারেন। মমির সঙ্গে হাত মেলানোরও অনুমতি রয়েছে।
এ ছাড়া ১৮০৩ সালে খুন হওয়া আইরিশ বিদ্রোহী রবার্ট এমেট, গণিতবিদ উইলিয়াম রোয়ান হ্যামিলটন-সহ প্রভাবশালী একাধিক মানুষের মমি রয়েছে এখানে।
আগে প্রতি সপ্তাহের শনিবার করে এবং বিশেষ কিছু দিনে গির্জার ভল্ট পুরোপুরি খোলা থাকে পর্যটকদের জন্য। ২০১৮ সালে শেষ বারের মতো এই ভল্ট পর্যটকেদের জন্য খোলা হয়েছিল। প্রায় ২৭ হাজার পর্যটক এসেছিলেন ওই বছর।
২০১৯ সালের শুরুতেই ভল্টে দুষ্কৃতী হানা হয়। অনেক মমিই লুঠ হয়ে যায়। ভল্টের প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হয়।
ক্রুশবিদ্ধ ওই মমির মাথা চুরি হযে যায়। সন্ন্যাসিনীর মমি ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়। বহু মমির হাড় বার করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। তার পর থেকে বহু দিন পর্যটকের জন্য ভল্টের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়।
পরবর্তীকালে তদন্ত চালিয়ে লুঠ হওয়া সমস্ত অংশই উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। আয়ারল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে ওগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। সম্প্রতি ওই গির্জার ভল্ট আবার পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
একুশেসংবাদ/অমৃ
আপনার মতামত লিখুন :