ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই মানেই বিশেষ কিছু। যদিও বিশ্বকাপ এলে দেখা যায় উল্টো চিত্র। ওয়ানডে বিশ্বকাপে কখনোই ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। সেই চিত্র অব্যাহত থাকলো এবারও।
টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে নিজের সেঞ্চুরির রেকর্ডটাকে আরও বাড়িয়ে নেয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন রোহিত, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতীয় অধিনায়ক আউট হয়ে গেছেন ৬৩ বলে ৮৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে। তাঁর পাশাপাশি চারে নামা শ্রেয়াস আইয়ারের ফিফটিতে হেসেখেলেই পাকিস্তানকে ৭ উইকেট ও ১১৭ বল হাতে রেখে হারিয়ে দিয়েছে ভারত। ১১৭ বল! বলতে গেলে আরেকটি টি-টোয়েন্টি খেলার মতো বলই তো বাকি ছিল!
ব্যাটিংয়ে ২ উইকেটে ১৫৫ রান থেকে পাকিস্তান যখন ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায়, ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, পাকিস্তান যা করল, তা শুধু পাকিস্তানের পক্ষেই সম্ভব। পাকিস্তানের নামের সঙ্গে ‘অননুমেয়’ ট্যাগ তো আর এমনি এমনি লেগে যায়নি। কিন্তু এই অননুমেয় ট্যাগের কারণেই ইনিংসের বিরতিতে আলোচনা ছিল, পাকিস্তানের জয়ের যদি সূক্ষ্ম সম্ভাবনাও থেকে থাকে, তা দলটা পাকিস্তান বলেই।
শাহিন-হারিসদের সৌজন্যে পাকিস্তান বোলিংয়েও অবিশ্বাস্য কিছু (ইতিবাচক অর্থে) করে ফেলবে, এ-ই তখন ছিল ধারণা। ভারতের টপ অর্ডার বাঁহাতি পেসের বিপক্ষে মাঝেমধ্যে পথ হারায়, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মোহাম্মদ আমির বা ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাহিনেরই বিধ্বংসী স্পেল পাকিস্তানকে তাই একেবারে বিশ্বাস হারাতে দেয়নি।
কিন্তু শাহিনরা আর তা পারলেন কই! ৪ ওভারের প্রথম স্পেলে শুবমান গিলের উইকেটটা পেলেও ৩২ রান দিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ তো ৬ ওভারে ৪৩ রান দিয়েও উইকেটই পেলেন না।
উল্টোদিকে ডেঙ্গুর ধকল কাটিয়ে ফেরা গিল ১১ বলে ৪ চারে ১৬ রান করে তৃতীয় ওভারেই দলকে ২৫ রানে রেখে আউট হয়ে গেলেও রোহিত জ্বলে উঠেছেন। এমন গতিতে রান তুলছিলেন, মনে হচ্ছিল যেন ভারতের লক্ষ্য ১৯২ নয়, ৩৫০-এর বেশি! প্রথম পাওয়ার প্লে-তেই ১০ ওভারে ভারত তুলে ফেলে ৭৯ রান, তার কিছুক্ষণ পর রোহিত ফিফটি পেয়ে যান ৩৬ বলে। সে পথে ততক্ষণেই রোহিতের ব্যাটে ৩ চারের পাশাপাশি ৪টি ছক্কা দেখা হয়ে গেছে। চতুর্থ ছক্কাটি আবার তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০০তম।
অন্য প্রান্তে বিরাট কোহলি দ্বিতীয় উইকেটে ৫৬ রানের জুটিতে রোহিতকে সঙ্গ দিয়েছেন, চোখধাঁধানো দুই কাভার ড্রাইভে আহমেদাবাদের লাখ দর্শকে ভর্তি গ্যালারি মাতিয়েছেন। শাহিনের এক ওভারে তো রোহিতের পুলে ছক্কার পর কোহলির কাভার ড্রাইভে চারে গ্যালারিতে গর্জন উঠেছে। তবে দশম ওভারে কোহলি আউট হয়ে গেছেন হাসান আলীর বলে বাজে একটা শটে (১৮ বলে ৩ চারে ১৬ রান)।
রোহিতের অবশ্য তাতে কিছু এসে যায়নি। কোহলির বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই ফিফটিতে পৌঁছেছেন, তারপর অন্য প্রান্তে শ্রেয়াসকে সঙ্গে নিয়েও একইরকম বেধড়ক পিটিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর ৮৬ রানের ইনিংস সেজেছে ৬টি চার আর ৬ ছক্কায়। ২২তম ওভারে রোহিতকে শেষ পর্যন্ত শাহিনই ফিরিয়েছেন, তবে ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ভারতের রান যে তখনই ১৫৬!
লোকেশ রাহুলকে (২৯ বলে ১৯) সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটুকু করতে বেগ পেতে হয়নি শ্রেয়াসকে। শেষ পর্যন্ত ভারতকে জেতানো বাউন্ডারিটি এসেছে শ্রেয়াসের ব্যাট থেকে, সে চারে আবার ৬২ বলে ৩ চার ২ ছক্কা দেখা ইনিংসটি ফিফটিতেও (৫৩ রান) পৌঁছেছে। একেবারে পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তি আর কী!
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :