AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ: আশাবাদ আর বাস্তবতার ফারাক


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১:৪৫ পিএম, ১৫ মে, ২০২৫

হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ: আশাবাদ আর বাস্তবতার ফারাক

বাংলাদেশে হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তব পরিস্থিতি এখনও চ্যালেঞ্জিং। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির এক যুগ পরও তারা বঞ্চিত সামাজিক মর্যাদা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও আইনি সুরক্ষা থেকে।

২০১৩ সালে সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‍‍`তৃতীয় লিঙ্গ‍‍` হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে মাসিক ভাতা, প্রশিক্ষণ ও আয়বর্ধক কার্যক্রম চালু করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের অক্ষম হিজড়াদের জন্য মাসিক ৬০০ টাকা ভাতা এবং ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কর্মক্ষমদের ৫০ দিন মেয়াদি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও ১০,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। এ পর্যন্ত ৭,৬৫০ জন হিজড়াকে এসব সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

তবে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। আদাবরের বাসিন্দা তিথী হিজড়া বলেন, “সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে কর্মসূচি চালায় তা শুধু কমিউনিটির ক্ষমতাবানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমরা শুধু দেখানোর বস্তু হয়ে থাকি, অথচ প্রকৃত সুবিধা পাই না।” তিনি আরও বলেন, “দুটি ভাগে বিভক্ত হিজড়া কমিউনিটির এক ভাগ এনজিও, অন্য ভাগ কালেকশন। সমাজকল্যাণের সুবিধাও এনজিও অংশটাই পায়।” আমরা মানুষ হিসেবেই স্বীকৃতি পাইনা আর হিজড়া হিসেবে তো দূরের কথা বলেও আফসোস করেন তিথী।

২০২৩ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হিজড়া সম্প্রদায়ের সুরক্ষা, অধিকার ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করার কাজ করছে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মো. জাহাঙ্গীর। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “যেন ১০ টাকার জন্যও হিজড়ারা রাস্তায় না দাঁড়ায়—সে বিষয়ে সরকার কাজ করছে।”

তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সচিবের বক্তব্য আশাব্যঞ্জক হলেও মাঠপর্যায়ে সেই নীতিমালার কার্যকর প্রয়োগ এখনো দৃশ্যমান নয়। বরং সরকারি সহায়তা পেতে হিজড়া সম্প্রদায়কে নানা প্রশাসনিক জটিলতা, পক্ষপাত এবং সামাজিক বৈষম্যের মুখে পড়তে হচ্ছে, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়েও রয়েছে হতাশা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রামিসা হিজড়া জানান, “কম্পিউটার, ড্রাইভিং বা অন্য যে কোনো প্রশিক্ষণ—সবই কেবল নামমাত্র। সময় অল্প, গুরুত্ব নেই, শেখানো হয় দায়সারাভাবে।” এখানেও রয়ে গেছে বৈষম্যে।

স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য ও আইনি দুর্বলতা

স্বাস্থ্যসেবা খাতে হিজড়াদের প্রতি আচরণও একই রকম বৈষম্যমূলক। “হাসপাতালে গেলে ডাক্তার পর্যন্ত ঠিকমতো কথা বলেন না,” জানান অনিন্দিতা আফরা বাবুনি, সম্ভভ ফাউন্ডেশনের সভাপতি। “শুধু অবহেলা নয়, যৌন নির্যাতনের অভিযোগেও থানায় হাস্যরসের শিকার হতে হয় তাদের। পুলিশও অনেক সময় উল্টো হিজড়াদেরই দোষী বানায়। বাবুনি বলেন, “থানায় কোনো বিষয়ে গেলে আমাদের কথার গুরুত্ব কম দেয়।জিডি বা মামলা নিতে চায়না পুলিশ। আর এলাকার কোন প্রভাবশালী হলে  উল্টো আমরাই আইনি ঝামেলা পোহাই আমাদের কথা শোনার যেন কেউ নেই”।    

বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তৃতীয় লিঙ্গের কোনো উল্লেখ নেই, ফলে হিজড়াদের উপর সহিংসতার ঘটনায় প্রতিকার পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্তর্ভুক্তির সংকট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক শাহ আহসান হাবীব মনে করেন, “সংসদীয় স্বীকৃতি থাকলেও সমাজ ও রাষ্ট্রের মনস্তত্ত্বে হিজড়াদের স্বীকৃতি এখনো হয়নি। তারা রাষ্ট্রীয় জনশক্তির অংশ হিসেবে বিবেচিত হন না, ফলে তাদের জন্য কার্যকর পদক্ষেপও দেখা যায় না।”

তিনি বলেন, “জন্মগত অধিকার না পাওয়ার ফলে হিজড়া সম্প্রদায় বাধ্য হয়ে ভিক্ষা বা বলপ্রয়োগে অর্থ আদায়ের পথে যাচ্ছে, যেটি আবার সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে।”

আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় উদ্যোগ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় “Expanding Civic Space through Active CSO Participation and Strengthened Governance System in Bangladesh (ECSAP)” প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে সচেতনতা ও সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ক্রিশ্চিয়ান এইড, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট, ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

পরিশেষে বলা যায় রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও কিছু উন্নয়নমূলক উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও, হিজড়া সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও আইনি সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং প্রকৃত অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।


একুশে সংবাদ/মনো/এ.জে

Shwapno
Link copied!