ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অন্তত ১৬টি জেলার মানুষ যাতায়াত করেন। দুই মহাসড়কের বড় একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে গেছে। ঈদযাত্রায় এই দুই মহাসড়কে যানজটে ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই বের হতে হয় ঘরমুখো মানুষজনকে।
এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আগেই মহাসড়ক দুটির সংস্কার কাজ শেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবু যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, অবৈধ পার্কিং, টোলপ্লাজায় ধীরগতি ও মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে শঙ্কা বাসচালক ও যাত্রীদের।
গত শনিবার ও শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাচপুর, মদনপুর, মোগরাপাড়া ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাচপুর, তারাব, রূপসী, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়ে বাসচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব এলাকায় স্বাভাবিক সময়েই যানজট থাকে। ঈদযাত্রায় মহাসড়কে গাড়ি বাড়লে যানজটও তীব্র হবে।
মহাসড়কে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, অবৈধ তিনচাকার ধীরগতির যানবাহনের অবাধ চলাচলকে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন যাত্রী ও চালকরা। সরেজমিনে এই অভিযোগের সত্যতাও মেলে।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/DCPkOUSXZG0bSzEhfv2o/images/fc70a28daf5898ab0f648fbf2f43904d9ee285833c7bcb27.jpg)
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাচপুর, মদনপুর এলাকায় ইচ্ছামতো বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং তিনচাকার যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এমনকি নির্ধারিত সরাসরি লেনে প্রবেশ না করে সার্ভিস লেনে ঢুকে যাত্রী তুলতে দেখা যায় দূরপাল্লার দ্রুতগামী বাসগুলোকে। এতে তৈরি হয় যানবাহনের জটলা। এদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব, রূপসী, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়ে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনার অবৈধ স্ট্যান্ড দিয়ে মহাসড়কটির এক-তৃতীয়াংশ জায়গা বেদখল হয়ে থাকতে দেখা যায়।
কথা হয় নরসিংদী-ভৈরবমুখী শুভযাত্রা পরিবহন নামে বাসের চালক মোহাম্মদ সবুজের সঙ্গে। তিনি বলেন,
`এখানে ছোটখাটো গাড়িগুলো রাস্তার উপর এলোমেলো হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো রাস্তা আটকে রাখে। ঈদের কয়েকদিন আগে গাড়ি বাড়লে যানজট বাড়বো। যদি কোনো মোড়ে ১০টা গাড়ি পাঁচ মিনিটের জন্য দাঁড়াইলে মাইলের পর মাইল যানজট লাইগা যাইবো।`
হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকলে যানজট থাকে না, মন্তব্য করে যাতায়াত পরিবহনের সুপারভাইজার মো. মামুন বলেন,
`জ্যাম হইলে তো শুধু যাত্রীর ভোগান্তি হয় তা না। আমাদেরও সমস্যা হয়। রাস্তায় পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন থাকলে জ্যাম থাকে না। তারা যদি ঠিকমতো মূল পয়েন্টগুলোতে কাজ না করে তাহলে জ্যাম থেকে রেহাই নাই।`
রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে শনির আখড়া দিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দির গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত সোজা চলে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৩৯ কিলোমিটারের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়।
কথা হয় এই কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌসের সাথে। তিনি বলেন,
এই দুই মহাসড়কের অবস্থার কারণে অন্তত যাত্রীভোগান্তি হবে না। কেননা ঈদের আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সকল সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। কোনো জায়গায় গর্ত পাওয়া যাবে না। যান চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, মদনপুর, মোগরাপাড়া, লাঙ্গলবন্দসহ কয়েকটি স্থানে ইউলুপও করা হয়েছে। দূরপাল্লার বাস ও দ্রুতগামী যান চলাচলের জন্য রয়েছে আলাদা সরাসরি লেন। আর সার্ভিস লেন দিয়ে চলাচল করবে জেলার ভেতরের স্বল্প পাল্লার যানবাহন।
মেঘনা টোলপ্লাজায় বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ইটিসি (ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন) পদ্ধতিও চালু করা হয়েছে। এই টোলপ্লাজায় আগে নয়টি টোলবুথ ছিল যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টি। তবে, মহাসড়ক দুটিতে যান চলাচলের অনিয়ম, অবৈধ পার্কিং, ধীরগতির যানবাহনের কারণে কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, `মহাসড়কে যান চলাচলের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। গত কয়েকবছর যাবত হাইওয়ে পুলিশের সাথে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। এবারও তাদের সাথে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। পুরো রাস্তাতেই হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া লোকাল গাড়িগুলো যেন সরাসরি লেনে এবং দূরপাল্লার বাসগুলো যেন সার্ভিস লেনে না প্রবেশ করে তাও নিশ্চিতে কাজ করতে হবে পুলিশের। আমরা সবাই চাই সুখকর একটি ঈদযাত্রা।`
মহাসড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নিয়মিত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অতিরিক্ত মোতায়েন থাকবে বলে জানান কাচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হক।
তিনি বলেন,
`হাইওয়ে পুলিশ সবসময় মাঠে আছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যও মোতায়েন থাকবে। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো, অবৈধ পার্কিং এবং তিনচাকার ধীরগতির যান চলাচল বন্ধেও তৎপর রয়েছে পুলিশ।`
একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :