AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাণিজ্য : রোগীর বোঝা, চিকিৎসকদের দায়িত্ব


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৬:৪১ পিএম, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাণিজ্য : রোগীর বোঝা, চিকিৎসকদের দায়িত্ব

বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি হলো অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা। রোগী ডাক্তারের কাছে গেলেই একাধিক পরীক্ষা দেওয়া হয়, অথচ এসব পরীক্ষার অনেক ফলই ভুল আসে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসায় রোগীদের যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, তার বড় একটি অংশ চলে যায় রোগ নির্ণয়ে। এর সিংহভাগই হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি খরচ হয়।

এই বাড়তি ব্যয়ের মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চিকিৎসকদের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ। সরকার স্বাস্থ্যসেবায় নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেও এখনো প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বেসরকারি চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। অথচ সরকারি হাসপাতালের বহু চিকিৎসক রোগীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে কমিশন নেন, বিশেষ করে কনসালট্যান্ট, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকরা এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। বড় প্রতিষ্ঠানের কমিশন হারও বেশি। ফলে প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা লাভবান হলেও রোগীরা চরম ভুক্তভোগী হন; প্রতিবছর অর্ধকোটি মানুষ চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ছে।

শুধু তাই নয়, ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি কিংবা স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও চিকিৎসকদের প্রলোভন দেয়। গাড়ি-বাড়ি থেকে শুরু করে ঈদ, পূজা বা পহেলা বৈশাখে নানা উপহার দিয়ে চিকিৎসকদের নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। এতে রোগীরা এমন ওষুধ ও সেবা গ্রহণে বাধ্য হন, যা সব সময় প্রয়োজনীয় নয়। এটি নিঃসন্দেহে এক ধরনের অনৈতিক ও বেআইনি কার্যকলাপ, যা চিকিৎসা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ভাষায়, “গরিব রোগীদের অনর্থক ১৪–১৫টি টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন মানুষ দেশের ভেতর সেবা না পেয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়? ভারত কিংবা ব্যাংককে এমন মানুষও যাচ্ছেন, যারা কোনোদিন ঢাকায়ও আসেননি। এর কারণ স্পষ্ট—দেশে আস্থার সংকট।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত কর্মীদের বঞ্চনা। নার্সদের বেতন গড়ে ১২ হাজার টাকা। এমন অপ্রতুল পারিশ্রমিক দিয়ে কীভাবে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা যায়? ফলে রোগীরা শুধু পরীক্ষার বাড়তি খরচেই নয়, মানহীন সেবা পেয়েও ভোগান্তিতে পড়ছেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও বৈষম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি, লাভজনক-অলাভজনক—সব প্রতিষ্ঠান মিলে ১৮ কোটি মানুষের সেবা দেওয়ার যে রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে, সেখানে সবার অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

তাই এখন জরুরি হলো—

  • চিকিৎসকদের অনৈতিক কমিশন ও উপহার গ্রহণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা,

  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনা,

  • নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ন্যায্য বেতন নিশ্চিত করা,

  • এবং বেসরকারি খাতের ন্যায়সংগত মুনাফা নিশ্চিতে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন।

এমন নীতি কার্যকর হলে অন্তত কিছুটা হলেও স্বাস্থ্য খাতের বিশৃঙ্খলা কমবে, এবং রোগীরা ন্যায্য সেবা পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

Link copied!