AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ব্যাংকে আস্থা ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ


Ekushey Sangbad
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
০৭:০৭ পিএম, ১৯ মার্চ, ২০২৩
ব্যাংকে আস্থা ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ

সম্প্রতি আমেরিকার দুটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ার খবর জানা গেল। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দেশটির সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার খবরে আমাদের দেশেও ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা দেখা দিয়েছে। এই আলোচনা একেবারে অযৌক্তিক নয়। বিশেষ করে, এখানে ব্যাংক খাতের নানা অনিয়মের খবরের বিপরীতে নতুন করে আমেরিকার এমন সংবাদ অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এই প্রথম আমেরিকায় এমন ঘটনা দেখা গেল। ওই বছরও যুক্তরাষ্ট্রে বেশ বড় কয়েকটা ব্যাংক ধসে পড়েছিল; যেখানে শেষ পর্যন্ত সরকারকে বেইল আউট কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়েছিল।

 

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত কী শিক্ষা নিতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। আমেরিকার দুটি ব্যাংক বন্ধের ঘোষণার পর গ্রাহকের আমানত তারা যেভাবে সুরক্ষিত রাখল, সেটিই বাংলাদেশের জন্য বড় শিক্ষা হতে পারে। সেখানে ব্যাংক বন্ধ হলেও গ্রাহকের আমানতের নিশ্চয়তা রাখা হয়েছে। দেশে আমানতকারীদের চেয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংস্থার স্বার্থ বেশি দেখা হয়। তাই এখানে গ্রাহকরা সবসময়ই আস্থাহীনতায় ভোগেন।

 

 

২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাত শক্তিশালী করতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষায় আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানতের বীমা দেওয়া হয়েছিল। দেশটির ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন গঠন করা হয়েছে ঠিক এ লক্ষ্যেই। বিপরীতে বাংলাদেশে মাত্র ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা দেওয়া আছে। এবারের সংকটে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বেইল আউট করা বা নানাভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়নি। যেটা ২০০৮ সালে করা হয়েছিল। এবার সংকট গুরুতর হওয়ার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক উভয় ক্ষেত্রেই এ ঘটনা দেখা গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেনি। মালিকপক্ষকে বাঁচানোর চেয়ে গ্রাহকদের কীভাবে সুবিধা হবে, তা নিশ্চিত করতেই মার্কিন সরকার ব্যস্ত।

 

আমরা আমেরিকার ব্যাংক বন্ধ হওয়ার পরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পেরেছি, সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ ঘোষণার পর দেশটির রাজস্ব বিভাগ ও ফেডারেল রিজার্ভের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থনীতি সুরক্ষিত ও মানুষের আস্থা ধরে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় সিগনেচার ব্যাংকের সব হিসাব আরেকটি ব্যাংকে, যেটির নাম ‘ফিফথ থার্ড ব্যাংক’, স্থানান্তর করেছে। তাতে গ্রাহকদেরও সমস্যা নেই। ঘটনার পর থেকেই গ্রাহকরা তাঁদের হিসাব ব্যবহার করে স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছেন। অর্থাৎ সে দেশের সরকার আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি বীমার বাইরেও আমানতের সুরক্ষা তারা দিচ্ছে। কিন্তু শেয়ারহোল্ডার ও বন্ডহোল্ডারদের সুরক্ষা দেয়নি। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

 

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের দিকে তাকালে বলতে হয়– আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়া বা তাঁদের আস্থায় আনা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। দেশের অনেক আমানতকারী অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না, ব্যাংক সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপ হচ্ছে। এতে করে শেষ বিচারে ব্যাংক খাতের জন্য ভালো হচ্ছে না। কারণ, এক ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলে আরেক ব্যাংকেও তার প্রভাব পড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশেষ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। গতানুগতিক ব্যবস্থা নিলে চলবে না। এখানে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুশাসনের ঘাটতি। ব্যাংক পরিচালনায় পরিচালকদের মাত্রাতিরিক্ত হস্তক্ষেপ। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু সংকট যতই হোক, বাংলাদেশে ইমেজ রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যাংকই বন্ধ হতে দেয় না। নীতিসহায়তা দিয়ে সচল রাখে। কিন্তু এভাবে ফুয়েল না দিয়ে ব্যাংকগুলোকে ভালো রাখতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে; সব খাতে নিশ্চিত করতে হবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ। বড় অঙ্কের ঋণের তদারকি বাড়াতে হবে। কমাতে হবে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকের সূচকের হিসাব করতে হবে সঠিকভাবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মতো অবস্থা যাতে না হয়, সে জন্য আমানত সুরক্ষা বীমা আরও বাড়াতে হবে। বড় বড় গ্রাহককে ছাড় না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমেরিকা সামাল দিতে পারলেও আমরা সামাল দিতে পারব না– এটা মনে রাখা উচিত।

 

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক বন্ধের ঘটনা থেকে বাংলাদেশের দুটি বিষয় শিক্ষণীয় আছে। একটি হচ্ছে, আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধ করা এবং অন্যটি আমানতের বিপরীতে বীমা সুবিধা বাড়ানো। এ বিষয়ে অচিরেই পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকের হিসাবে কারসাজি করে সম্পদ ভালো দেখানো হচ্ছে। একটি পর্যায়ে তা প্রকাশ হলে সংকটে পড়ে ব্যাংক। এগুলো ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়াতে হবে। আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে হবে। আমরা জানি, দেশে বেশ কিছু ব্যাংক ভালো নেই। এতে সার্বিক অর্থনীতি ও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতিতে রিটার্ন কমে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বীমা কাভারেজ বাড়াতে হবে। প্রিমিয়াম আরও বাড়াতে হবে।

 

শেষ কথা হচ্ছে, মূলত আস্থাহীনতার কারণেই আমেরিকার ব্যাংক দুটি ধসে পড়েছে। তাই আমাদের দেশের ব্যাংক খাতের জন্য বড় শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে, গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখা। কেননা, আমাদের দেশেও বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের আস্থাহীনতার নজির তৈরি হয়েছে, যা কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না। আমাদের দেশে ব্যাংকধসের আশঙ্কা এ মুহূর্তে না থাকলেও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে মনিটর করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

একুশে সংবাদ.কম/স.ল.প্র/জাহাঙ্গীর

Link copied!