পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দাবি করেছেন, একাত্তরের গণহত্যা ইস্যুসহ অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান অতীতে দুইবার হয়েছে। রোববার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইসহাক দার বলেন, “অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে বলতে চাই, প্রথম সমাধান হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। তখনকার চুক্তিটি দুই দেশের জন্যই ঐতিহাসিক। পরে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বাংলাদেশ সফরে এসে খোলামনেই আবারও ইস্যুটির নিষ্পত্তি করেন। অর্থাৎ, একবার ১৯৭৪ সালে এবং আরেকবার ২০০০ সালের শুরুর দিকে বিষয়টির সমাধান হয়েছে।”
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধ-ক্ষতিপূরণ, আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা বণ্টন এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়-সংক্রান্ত বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো বিষয়গুলো উত্থাপিত হয় বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠককে কেন্দ্র করে অন্তত ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি, সাংস্কৃতিক বিনিময়, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে যৌথ গ্রুপ গঠন, কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা। এছাড়া মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
বৈঠকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাণিজ্য বাড়ানো ও সংযোগ জোরদারে দুই দেশ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বৈঠক কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ, সার্ক পুনরুজ্জীবন এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি নিয়ে আলাপ হয় বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়।
ঢাকায় সফরকালে ইসহাক দার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে তার।
শনিবার ঢাকা পৌঁছালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এটি পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার তৃতীয় উচ্চপর্যায়ের সফর। এর আগে গত জুলাইয়ে এসেছিলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী এবং কয়েকদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ঢাকা সফর করেন।
একুশে সংবাদ/স.কা/এ.জে