নিরাপদ খাদ্য হচ্ছে মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। প্রতিটি মানুষ চায় যে তার গ্রহণ করা খাদ্যটি হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ। এ ধরনের খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদক, সরকার, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণ—সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শুধু ক্রেতা হিসেবে নয়, ভোক্তারাও খাদ্য ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা সচেতনভাবে খাবার নির্বাচন করে, কোনো সমস্যা দেখলে রিপোর্ট করে এবং এভাবেই একজন সাধারণ মানুষও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক আলোচনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণে ভোক্তাদের জোরালো ভূমিকা সম্পর্কে বলেছেন।
তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন শুধু কৃষক, উৎপাদক বা সরকারের কাজ নয়। এটি ভোক্তা বা গ্রাহক হিসেবে আমাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমরা যদি সচেতন হই, ভালো পণ্য বাছাই করি এবং সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে পুরো খাদ্য ব্যবস্থাই নিরাপদ হতে পারে।
ভোক্তারা যেভাবে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারেন এই সম্পর্কে আলোচনায় অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুন বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন।
তিনি বলেন, ভোক্তাদের সচেতনতা ও শিক্ষা এক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জানতে হবে কোনো কোনো খাদ্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যেমন খাবারে ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক বা রাসায়নিক থাকলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। এসব বিষয়ে জানা থাকলে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। খাবার কেনার সময় ভোক্তাদের উচিত পণ্যের গায়ে থাকা লেবেল দেখা- যেমন জৈব, ভেজালমুক্ত, মেয়াদ আছে কি না ইত্যাদি দেখে নিরাপদ পণ্য নির্বাচন করা।
ক্ষতিগ্রস্ত বা খোলা প্যাকেটও এড়িয়ে চলা ভালো। স্থানীয় কৃষক বা উৎপাদকের কাছ থেকে খাবার কিনলে তার উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে সহজে জানা যায়। এতে স্বচ্ছতা ও আস্থা বাড়ে। তাই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। ভোক্তারা চাইলে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন খাবার কীভাবে তৈরি হলো, কী ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি। এতে উৎপাদনকারীরাও সচেতন হয়।
তিনি আরও বলেন, সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণ ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে হবে। খাবার ফ্রিজে রাখা, রান্নার আগে ও পরে হাত ধোয়া, কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা- এসব সহজ নিয়ম মেনে চললে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ভোক্তাদের উচিত যতটুকু খাদ্য দরকার ততটুকু খাদ্য ক্রয় করা যাতে খাদ্য নষ্ট হয় না। এর ফলে পরিবেশেরও উপকার হবে, আবার উৎপাদন প্রক্রিয়াও টেকসই হবে। পচা বা নষ্ট খাবার ভুলভাবে ফেললে পরিবেশ দূষণ হতে পারে। তাই বর্জ্য ঠিকভাবে ফেলা এবং প্রয়োজনে পুনর্ব্যবহার করা জরুরি।
ভোক্তা হিসেবে প্রত্যেকের সচেতন আচরণই গড়ে তুলতে পারে একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই খাদ্য পরিবেশ। এই বিষয়টি উল্লেখ করে অধ্যাপক মিনারা খাতুন বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা কেবল উৎপাদনকারীদের একক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবারই দায়িত্ব। ভোক্তারা সচেতনভাবে খাদ্য নির্বাচন করলে, উৎপাদকরাও মানসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহ পান। তাই প্রত্যেকের সচেতন আচরণই গড়ে তুলতে পারে একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই খাদ্য পরিবেশ।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো খাদ্যে দুর্গন্ধ, অস্বাভাবিক রং কিংবা স্বাদ থাকলে তা অবহেলা না করে স্থানীয় প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জানানো উচিত। পাশাপাশি সচেতন ভোক্তারা চাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন অথবা স্থানীয় সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। এতে আরও মানুষ সচেতন হবে এবং একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা গড়ে উঠবে। ভোক্তাদের সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন ও উদ্যোগকে সমর্থন করতে হবে এবং অন্যদেরকেও সচেতন করতে হবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

