জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন ও বিভাজন ঘিরে আন্দোলনে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সরকারের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ আরও কঠোর হচ্ছে। আন্দোলন প্রত্যাহারের মাত্র এক সপ্তাহ না যেতেই পাঁচজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)– আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এনবিআরের ভেতরে।
সরকারি কঠোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে যুক্ত থাকা অনেক কর্মকর্তা ইতিমধ্যে নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল বন্ধ করে দিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।
এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, আরও অন্তত ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সাময়িক বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর ও বিভাগীয় বদলি। মূলত আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত দুই দিনে ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নতুন করে পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তারা হলেন:
মো. কামারুজ্জামান, কমিশনার, বেনাপোল কাস্টমস হাউস
কাজী মো. জিয়াউদ্দিন, কমিশনার, ঢাকা পূর্ব কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট
সেহেলা সিদ্দিকা, অতিরিক্ত কর কমিশনার
মো. মামুন মিয়া, উপ-কর কমিশনার
লোকমান আহমেদ, কর পরিদর্শক
এর আগে চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। আইআরডি থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি আদেশ জারি করা হয়।
প্রশাসনের শীর্ষ মহলের এমন কঠোরতায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এনবিআরের অভ্যন্তরে। সূত্রমতে, এনবিআরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের অবস্থান গোপন রাখতে সচেষ্ট। আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ তালিকার ভিত্তিতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বার্তা স্পষ্ট: "আন্দোলনের নামে প্রশাসনকে অকার্যকর করার চেষ্টা করলে ছাড় দেওয়া হবে না।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, এনবিআর সংস্কারকে কেন্দ্র করে এই অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়তে পারে। তবে সরকার এখনই শক্ত হাতে হাল ধরেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
একুশে সংবাদ//ঢা.প//র.ন