পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে পাট, কাগজ ও কাপড়সহ এর পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং বৃক্ষমেলা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, প্লাস্টিক দূষণ রোধে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং দেশের সব সুপারশপ ইতোমধ্যে শতভাগ পলিথিনমুক্ত হয়েছে। একবার ব্যবহারযোগ্য ১৭টি প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধের কার্যক্রম এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সরকার EPR (Extended Producer Responsibility) ও 3R (Reduce, Reuse, Recycle) নীতির বাস্তবায়নেও কাজ করছে।
এ সময় উপদেষ্টা জানান, ১৯২৭ সালের বন আইন, ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও জীববৈচিত্র্য আইনের সংস্কারের কাজ চলছে। পাশাপাশি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং পরিবেশ প্রশাসনে পৃথক ক্যাডার গঠনের প্রস্তাব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রয়েছে।
দেশের নদ-নদীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং ঢাকার চারপাশের নদী ও ২০টি খালের জন্য `ব্লু-নেটওয়ার্ক` পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। বড়াল, করতোয়া, সুতাংসহ ১৫টি নদীর পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নদীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় চালু হচ্ছে ‘হেলথ কার্ড’।
বন সংরক্ষণে মধুপুর শালবন ও চুনতি বন পুনরুদ্ধার, সোনাদিয়া উপকূলীয় বন ও রাজশাহীর দুটি জলাভূমিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণার কথা তুলে ধরেন তিনি। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে “নো ব্রিকফিল্ড জোন” গঠন এবং পুরনো যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “গত আগস্ট থেকে ১,৭১৭ একর বনভূমি উদ্ধার এবং ২,০০০টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। নির্মাণে ব্লক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা কার্যকর হচ্ছে।”
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “পরিবেশ সুরক্ষা শুধু দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। সকলকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ ও স্লোগান ‘বন্ধ করার এখনই সময়’ অত্যন্ত সময়োপযোগী। পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, তরুণ প্রতিনিধিরা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
পরিবেশ ও বৃক্ষরোপণে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এসময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা ফিতা কেটে বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলা উদ্বোধন করেন এবং স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২৫–২৭ জুন পর্যন্ত চলবে এবং বৃক্ষমেলা চলবে ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
একুশে সংবাদ/ এ.জে