চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া বিক্রি নিয়ে এবছরও সমস্যার মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে চামড়া সাজিয়ে রাখলেও আশানুরূপ বিক্রি হয়নি বলে জানান তারা।
অন্যদিকে আড়তদারদের বক্তব্য, সরকার নির্ধারিত দর লবণযুক্ত সংরক্ষিত চামড়ার জন্য প্রযোজ্য, কাঁচা বা লবণবিহীন চামড়ার জন্য নয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে অনেকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোছাইন জানান, তিনি গড়ে প্রতি চামড়া ৪০০ টাকায় কিনলেও, আড়তদাররা সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দিতে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, "এবারও হয়তো লোকসান গুনতে হবে। গত বছরও প্রায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছিল।"
আরেক ব্যবসায়ী মো. এহেসান বলেন, "আমি ৫০টি বড় গরুর চামড়া কিনেছি গড়ে ৪৫০ টাকায়, অথচ বিক্রি করতে হয়েছে ৩৭০ টাকা দরে।"
তথ্য অনুযায়ী, সরকার এবছর কাঁচা চামড়ার মূল্য কিছুটা বাড়িয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে এ দাম ৫৫-৬০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।
আড়তদাররা জানান, একটি চামড়া সংগ্রহ থেকে সংরক্ষণ, পরিবহন ও আড়তের খরচ মিলিয়ে গড়ে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। তদুপরি ট্যানারিগুলো সাধারণত ২০ শতাংশ পর্যন্ত কাটছাঁট করে থাকে, ফলে বেশি দামে কিনে লাভবান হওয়া কঠিন।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, লবণবিহীন চামড়া উচ্চ মূল্যে ক্রয় সম্ভব নয়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক সময় এই বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়েই চামড়া কিনে লোকসানে পড়েন। তিনি আরও বলেন, এবছর কিছু ক্ষেত্রে চামড়ার ভালো দাম পাওয়া গেছে—কিছু চামড়া ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্য মূলত প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষিত চামড়ার জন্য। অনেকেই ভেবে নেন, সব ধরনের চামড়া ওই দামে বিক্রি সম্ভব, যা বাস্তবসম্মত নয়। তাছাড়া, চট্টগ্রামের বাজারে সব চামড়া বিক্রি সম্ভব হয় না, অনেক সময় ঢাকায় পাঠাতে হয়, এতে পরিবহন ও অন্যান্য ব্যয়ও যুক্ত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে অতিরিক্ত কাঁচা চামড়া থাকলে তা রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে। এবছর চামড়া রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সঠিকভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেশের মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোতে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/ ঢ.প/ এ.জে