বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে বড় দুই দলকে এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় তার ঢাকার বাসভবন ‘যমুনা’য় পৃথকভাবে বৈঠকে বসছেন তিনি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, “প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আমাদের সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে সাক্ষাতের সময় জানানো হয়েছে।” দলের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
জামায়াতে ইসলামীও বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছিলাম। আজ রাত সাড়ে ৮টায় সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হয়েছে।” জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় বলে জানিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করে। এরপর ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগের চিন্তা করছেন। এ নিয়ে তৈরি হয় নানা গুঞ্জন।
তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পদত্যাগের খবর অস্বীকার করা হয়েছে।
বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব সামাজিক মাধ্যমে স্পষ্ট করে লিখেছেন, “প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না।”
বিএনপিও এই অবস্থানে সমর্থন দিয়ে বলেছে, “প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা আছে। তবে তিনি থাকতে না চাইলে জনগণ বিকল্প বেছে নেবে।”
পদত্যাগ ভাবনার পেছনে কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে—
সেনাপ্রধানের বিতর্কিত বক্তব্য
ইসির আগ বাড়িয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি
এনবিআর বিলুপ্তি ঘিরে বন্দর সংকট ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের আন্দোলন
বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাদের হত্যাকাণ্ড ঘিরে সংঘাত
একজন উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ
এই বৈঠক শুধু দুই দলের সঙ্গে মতবিনিময় নয়—এই বৈঠক হতে পারে জাতীয় সংলাপের পূর্বাভাস। একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, অধ্যাপক ইউনূস এ বৈঠকের মাধ্যমে একটি সমঝোতা বা জাতীয় ঐক্যের পথ উন্মুক্ত করতে চাইছেন।
একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে, জামায়াত ইতোমধ্যেই সর্বদলীয় সংলাপের দাবি তুলেছে, বিএনপিও এখন মুখোমুখি আলোচনায় রাজি হয়েছে—যা গত মাস পর্যন্ত অসম্ভব বলে বিবেচিত ছিল।
এই বৈঠকের ফলাফল নির্ভর করবে পক্ষগুলোর নমনীয়তা ও সমঝোতার মনোভাবের ওপর। অন্তর্বর্তী সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ এখন শুধু একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ নয়, বরং সব পক্ষকে একটি ন্যূনতম সমঝোতায় পৌঁছে দেওয়া।
একুশে সংবাদ/আ.ট/এ.জে