আজ বৃহস্পতিবার, ১ মে—মহান মে দিবস, বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, ন্যায্য মজুরি ও শোষণমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা রক্ত ঝরিয়ে দাবি জানিয়েছিলেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের। সেই আত্মত্যাগের স্মরণেই বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে এ দিনটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য:“শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে।”
১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর হে মার্কেট স্কয়ার-এ হাজারো শ্রমিক জমায়েত হন কাজের সময় নির্ধারণ ও শ্রমের ন্যায্য মূল্য দাবিতে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ১০ শ্রমিক। এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে এবং শ্রমিকদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় আট ঘণ্টার কর্মদিবসের নীতি।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৮৯০ সাল থেকে মে দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন—“শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক। এ দেশের পোশাক, কৃষি, শিল্প, পরিবহন ও প্রযুক্তি খাতের পেছনে রয়েছে তাদের মিলিত মেধা ও শ্রম। ঐক্য, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতেই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তব হতে পারে।”
বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করছে শ্রম সংস্কার কমিশন। ১০ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশনটি ২১ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এছাড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমিক ছাঁটাই ও মে দিবসে কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে।
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও বিজিএমইএ’র ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের স্মারকে বলা হয়,
“মহান মে দিবসে সকল কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। কোনো কারখানা খোলা থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বর্তমান প্রতিপাদ্যে যেমন উঠে এসেছে, শ্রমিক-মালিক ঐক্য ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। মে দিবস সেই ঐতিহাসিক উপলক্ষ, যা শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের জীবনমান ও অধিকার উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।
একুশে সংবাদ// আ.ট//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :