আগামী ৯ জুন যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের উদ্দেশ্য হলো কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ গ্রহণ করা। সফরকালে তাঁর ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এই সফর শুধু পুরস্কার গ্রহণেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট এবং অর্থপাচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করাও এর অন্যতম লক্ষ্য।
সফরের প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী ১০ জুন লন্ডনে পৌঁছাবেন প্রধান উপদেষ্টা, আর ১৩ জুন দেশে ফিরবেন। এ সময় রাজপরিবারের একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এখনও চূড়ান্ত না হলেও আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, বুধবার বা বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং যুক্তরাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রীও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক মহলের মতে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার এখন আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই ব্রিটেন এ প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ, নির্বাচনী পরিবেশ এবং সুশাসন ইস্যুতে এই সফরকালে ব্রিটেনের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা।
মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, লিঙ্গ-সমতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা— এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে। ব্রিটেন ইতোমধ্যেই এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানবাধিকারবিষয়ক ব্রিটিশ দূত এলেনর স্যান্ডার্স ঢাকা সফর করেছিলেন এবং এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগেও উভয় দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পোশাক, চিংড়ি, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে এবং বিপরীতে বাংলাদেশে অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করছে। এই অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী ঢাকা।
অর্থপাচার ইস্যুতেও গুরুত্ব দিচ্ছে উভয় দেশ। ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের একটি অংশের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মার্চ মাসে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। এই সফরে সে বিষয়েও অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা জাতিসংঘের মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ বজায় রেখেছে এবং মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ২০১৮ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একুশে সংবাদ / আ.ট/এ.জে