চলতি অর্থবছরের জন্য (২০২৪-২০২৫) ৬ হাজার ৭৬০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। বুধবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর নগর ভবনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বাজেট ঘোষণাকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তথ্য জানান, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অন্যান্য আয় ধরা হয়েছে ১০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সরকারি থোক ও বিশেষ বরাদ্দ ৭০ কোটি এবং মোট সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। আর ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেখানে অন্যান ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২ লাখ টাকা। এছাড়া ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন ব্যয় ১ হাজার ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়ক উন্নয়ন ব্যয় ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা, মোট উন্নয়ন ব্যয় ৫ হাজার ৩৬৮ কোট ৩১ লাখ টাকা এবং সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা
মেয়র বলেন কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর ইতোমধ্যে আমার মেয়াদকাল ৪ বছর ২ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারীর সংকটকালে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করি। তথাপি নির্বাচনের প্রাক্কালে ঢাকাবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন কর্মস্পৃহা ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আমরা বিস্তৃত কর্মযজ্ঞ শুরু করি।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫১৩.৯৬ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০৩.৩১ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৭৯.৬৫ কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১,০৩১.৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আমি আনন্দের সাথে জানাতে চাই যে, বিগত অর্থবছরে পূর্বেকার সকল মাইলফলক অতিক্রম করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১,০৬১.৫৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের নতুন ইতিহাস গড়তে সমর্থ হয়েছি।
কয়েকটি কারণে এই অসাধ্য সাধন সম্ভবপর হয়েছে বলে আমরা মনে করি। প্রথমত, ঢাকাবাসী শুধু আমাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেননি, আমাদের ওপর পরিপূর্ণ আস্থাও রেখেছেন। ঢাকাবাসী বিশ্বাস করে, `উন্নত ঢাকা` গড়তে আমরা সক্ষম। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি অব্যাহত রয়েছে। ফলে দুর্নীতি কমেছে এবং আয় বেড়েছে। তৃতীয়ত, সামষ্টিকভাবে উল্লেখযোগ্য হারে হয়রানি কমেছে এবং সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ঢাকাবাসীর আস্থা বেড়েছে এবং কর পরিশোধ করার আগ্রহও বেড়েছে। চতুর্থত, ব্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্বেকার যে কোনও সময়ের চাইতে জবাবদিহিতা বেড়েছে এবং অপচয় রোধ হয়েছে। পঞ্চমত, আমার সাথে যারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, তারা তাদের উদ্যম, উদ্যোগ, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে জনকল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন এবং কর্মকর্তাগণ নিজেদের দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠ নেতৃত্ব গুণে অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করে চলেছেন। ফলে, আমরা নতুন এই মাইলফলক রচনা করতে সক্ষম হয়েছি।
মেয়র বলেন, বাজেট ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের বদৌলতে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোন রকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিগত ৪ বছরে আমরা কোন খাতে কোন কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত হতে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে, আয়ের খাত বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ এবং বকেয়া কর আদায়ের মাধ্যমে আমরা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, বিগত অর্থবছরে যে সকল খাত হতে আমরা সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করেছি তন্মধ্যে গৃহ কর (Holding Tax) অন্যতম। গত অর্থবছরে এ খাত হতে ৪০০.৩৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, যা, কর্পোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গৃহ কর বাবদ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪৭.২৩ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২৪.৪০ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫৪.৮৫ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮২ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
সুতরাং, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাপেক্ষে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এই খাতে আদায় বেড়েছে ৫৩.১৪ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাপেক্ষে বিগত অর্থবছরে দ্বিগুণের বেশি গৃহ কর আদায় করা হয়েছে। শতাংশের বিচারে প্রবৃদ্ধির এই হার প্রায় ২২০ শতাংশ। গত অর্থবছরে বাণিজ্য অনুমতি (Trade Licence) বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৬.৮২ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাণিজ্য অনুমতি খাতে রাজস্ব আদায় ছিল ৫৫ কোটি টাকা। সুতরাং, ৪ বছরের ব্যবধানে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
কোরবানি উপলক্ষ্যে অস্থায়ী ও স্থায়ী পশুর হাটের ইজারা হতে গত অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৬.৩৯ কোটি টাকা, যা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২৩.৬০ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৩.১৭ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯.৮৪ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮.১০ কোটি টাকা। অতএব, ৪ বছরের ব্যবধানে এ খাতে প্রায় ৪৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার, ভাগাড় ইত্যাদি ইজারা হতে গত অর্থবছরে ২৫.৩২ কোটি টাকা আয় হয়েছে। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮.৫৫ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫.১৯ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১.২৩ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাত্র ৪.৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। সামষ্টিকভাবে ৪ বছরের ব্যবধানে এ খাতে আয় বেড়েছে সাড়ে ৫’শ শতাংশের চাইতেও বেশি।
আপনারা জানেন, পিপিপি’র আওতায় বাস্তবায়িত মেয়র হানিফ উড়ালসেতুর আয় হতে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব পাওয়ার কথা থাকলেও আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে এ খাত হতে কর্পোরেশন কখনোই আয় করতে পারেনি বা করেনি। দায়িত্বভার গ্রহণের পর ২০২০-২১ অর্থবছরে মেয়র হানিফ উড়ালসেতু হতে আমরা প্রথমবারের মতো ৬.৩১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হই। বিগত ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাত হতে আদায়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮.০২ কোটি, ৯.২৯ কোটি ও ৯.২৯ কোটি টাকা।
বাজার সালামী খাতে গত অর্থবছরে আমরা ১৪৫.৩৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে সমর্থ হয়েছি। এ খাতে ২০২২-২৩, ২০২১-২২, ২০২০-২১ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে যথাক্রমে আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৩৯.৯৮ কোটি, ১০৯.৪৭ কোটি, ৩৮.২৮ কোটি ও ২৯.৭০ কোটি টাকা। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাপেক্ষে বিগত অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫ গুণ।
এছাড়াও স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩২.২৭ কোটি ও স্থায়ী আমানতের সুদ হতে ৬৯.১০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উল্লিখিত খাতসমূহ হতে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪৩.১৬ কোটি ও ৪৫.৬৮ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০২০-২১ অর্থবছরের পূর্বেকার বছরগুলোতে স্থায়ী আমানতের সুদ হতে আয়ের পরিমাণ ছিল শূন্য।
একইভাবে ‘রাস্তা খনন ফিস’ খাতে গত অর্থবছরে ৬২.০৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। তাছাড়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ‘বিবাহ, তালাক, দত্তক গ্রহণ ও যিয়াফত বা ভোজের ওপর কর’ খাত হতে গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ০.০৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে।
ফলে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সমাপনী স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২৩.৮১ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী অর্থবছরের সমাপনী স্থিতি কিংবা নতুন (চলমান) অর্থবছরের প্রারম্ভিক স্থিতিতেও কর্পোরেশনের ইতিহাসে এটি নতুন আরেকটি মাইলফলক।
তিনি বলে, এক সময় ঢাকা শহরের অলিগলি হতে শুরু করে মূল সড়ক পর্যন্ত সর্বত্রই যত্রতত্র উপচে পড়া বর্জ্যে সয়লাব ছিল। কিন্তু বিগত ৪ বছরে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছি।
আপনারা জানেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়নে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর (এসটিএস) কেন্দ্র অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু ২০২০ সালের পূর্ববর্তী ৫০ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় মাত্র ২৪টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। বিগত ৪ বছরে আমরা নতুন ৪১টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। বাকী ওয়ার্ডগুলোতেও অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়নে বিগত অর্থবছরে আমরা ১০ টন সক্ষমতার নতুন ২৫টি ডাম্প ট্রাক, ৩ টন সক্ষমতার নতুন ১৫টি ডাম্প ট্রাক এবং নতুন ১০টি পে-লোডার ক্রয় করেছি। ফলে, বর্জ্য অপসারণ ও স্থানান্তরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা আগের চাইতে অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী (PCSP) ও পুরাতন ৫টি অঞ্চলে চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন করা হয়েছে। নতুন ৫টি অঞ্চলে চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সর্বোপরি সূচি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি ঝাড়ু দেওয়া ও রাতের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হতে মাতুয়াইল কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে বর্জ্য স্থানান্তর নিশ্চিত করা হয়েছে।
আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাত হতে কর্পোরেশন অতীতে কখনোই কোন আয় করতে সমর্থ হয়নি। শুধু ব্যয়ের নিক্তিই হিসাব করা হতো। কিন্তু দায়িত্বভার গ্রহণের পর আমরা ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাসাবাড়ি হতে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন প্রদান শুরু করি এবং সে অর্থবছরে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন বাবদ ৮.৬৪ কোটি টাকা আয় করতে সমর্থ হই। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী (PCSP) ও পুরাতন ৫টি অঞ্চলে চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন বাবদ আমরা ৯.৯০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছি।
ফলে, সামষ্টিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আধুনিকায়ন নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে শহরের সৌন্দর্য। দূর হয়েছে যত্রতত্র উপচে পড়া বর্জ্যের উৎকট গন্ধে পথ চলার যন্ত্রণা।
তিনি বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের পর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে আমরা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেই। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ৬ জুন আমরা বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করি। পূর্বের মৌসুমভিত্তিক কার্যক্রমের পরিবর্তে বর্তমানে সূচি অনুযায়ী সারাবছরই আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছি।
শুধু তাই নয়, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবান করতে আমরা নতুন মশককর্মী নিয়োগ দিয়েছি। পূর্বে ৪২৪ জন মশককর্মী এই কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বর্তমানে ১ হাজার ৫০ মশককর্মী ও মশক সুপারভাইজার নিয়মিতভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। একইসাথে মশক নিয়ন্ত্রণ কাজে মানসম্পন্ন কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।
আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে ৫৫১টি ফগার মেশিন, ৪৩১টি হস্তচালিত যন্ত্র (Hand Spray Machine) ও ১৭টি Wheel Barrow Machine দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। বিগত ৪ বছরে আমরা নতুন আরো ৫৩৫টি ফগার মেশিন, ৬০০টি হস্তচালিত যন্ত্র ও ২৯টি Wheel Barrow Machine ক্রয় করেছি। ফলে, বর্তমানে বর্ধিত কলেবরে মাঠ পর্যায়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
মশক নিয়ন্ত্রণ বিশেষত এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ হতে মুক্তি দিতে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আলোকে গত মে মাসে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিনিময় করেছি। মতবিনিময় সভায় দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সূচারূভাবে এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে মতবিনিময় সভায় সুনির্দিষ্ট ফোকাল পার্সনও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মতবিনিময় সভার সেসব দিকনির্দেশনার প্রতিফলন মাঠ পর্যায়ে পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, সীমানা নির্ধারণের পর খাল পুনরুদ্ধার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন, বাই সাইকেল লেন ও এপ্রোচ রোড নির্মাণ, দৃষ্টিনন্দন এলইডি বাতি স্থাপন, জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) নির্মাণ, বসার আসন (বেঞ্চ) স্থাপন, উন্মুক্ত মিলনায়তন (এম্পিথিয়েটার) ও নর্দমা অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যায়াম করার সেড স্থাপন, আর. সি. সি. সংরক্ষণকারী দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল) ও ঢাল সুরক্ষা নির্মাণ, দৃষ্টিনন্দন সুরক্ষা বেষ্টনী ও গণশৌচাগার নির্মাণ ইত্যাদি অনুষঙ্গ রয়েছে। এছাড়াও খালের দু`পাড় ঘেঁষে বৃক্ষরোপণ ও ল্যান্ডস্কেপিং করার মাধ্যমে খাল ঘিরে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। ৮৯৮ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে `খাল পুনরুদ্ধার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি` নামক এই প্রকল্প ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হবে।
কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়ের বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের প্রায় পুরোটাই ভূমিদস্যুদের কব্জায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী আমরা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল হতে নিজস্ব অর্থায়নে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টন বর্জ্য, পলি ও উন্নয়ন কাজের উচ্ছিষ্টাংশ (রাবিশ) অপসারণ করা হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে চ্যানেলের সীমানা পিলার স্থাপন কার্যক্রম। চ্যানেল ঘিরে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা প্রনয়ণের জন্য ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে ডিপিপি প্রনয়ণ করা হবে।
জলজট ও জলাবদ্ধতা এই শহরের পুঞ্জিভূত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সামান্য বৃষ্টিতেই এই শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যেত। এই সমস্যা নিরসনে বাৎসরিক সূচি অনুযায়ী খাল, Box Culvert ও নর্দমা হতে বর্জ্য ও পলি অপসারণের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা প্রবণ মোট ১৬১টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ১০৯টি স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। ২৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে এবং বাকী ২৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে, সামান্য বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা সমস্যা ৭০ শতাংশ হতে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।
কিন্তু বিগত ১২ জুলাই তারিখে অতি অল্প সময়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের ফলে ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাই, জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞবৃন্দের সাথে দিনব্যাপী মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। ঢাকাবাসীকে জলমগ্নতা ও জলাবদ্ধতার কবল হতে মুক্তি দিতে সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ঢাকা ওয়াসা হতে খাল, নর্দমা ও Box Culvert এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে ৫৫টি জলকপাট (স্লুইস গেইট) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হলেও নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন খালগুলো এখনো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হয়নি। কিন্তু জলাবদ্ধতার টেকসই সমাধান পেতে হলে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিকল্পিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি। সেজন্য হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় আটকে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো দ্রুত আমাদের নিকট হস্তান্তর করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ