পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে লাখ লাখ হজযাত্রী মক্কার অদূরে মিনায় অবস্থান করছেন শুক্রবার (১৪ জুন)। এর আগে তারা মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় তাওয়াফ আল-কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) সম্পন্ন করেছেন। এ সময় হজযাত্রীরা পবিত্র কাবা প্রদক্ষিণ করে হজে অংশ নিতে পারায় মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হজযাত্রীরা মিনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। মিনা হচ্ছে মক্কা থেকে প্রায় পাঁচ থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত একটি তাঁবুর শহর। হজের আনুষ্ঠানিকতায় পায়ে হেঁটে অথবা বাসে চড়ে পবিত্র নগরী মক্কার পাশে তাঁবুর শহর মিনায় পৌঁছেছেন হজযাত্রীরা। সৌদি কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা শত শত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে করে ও হেঁটে এহরাম (হজের পোশাক) পরে এবং স্যান্ডেল পায়ে রোদে ছাতা মাথায় এই যাত্রায় অংশ নিয়েছেন হাজিরা।
তাঁবুনগরী মিনায় এখন উচ্চারিত হতে শোনা যাচ্ছে—লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা। (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)। মিনা থেকে হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে যাবেন, যেখানে মহানবি হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিদায়ী খুতবা দিয়েছিলেন।
সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী শুক্রবার ৮ জিলহজ, যা তারবিয়ার দিন হিসেবে পরিচিত। হজযাত্রীরা সারা দিন ও রাত মিনায় অবস্থান করবেন। পরের দিন আরাফাত পর্বতে মহাপুণ্যময় ইবাদতের জন্য নিজেদের মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে এই সময়টাকে কাজে লাগাবেন তারা।
আগামীকাল ৯ জিলহজ শনিবার হাজিরা আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হবেন। এই পবিত্র স্থানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে দোয়া করবেন তারা। এ ছাড়া আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে হজযাত্রীরা নামিরাহ মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী সম্মিলিতভাবে আল্লাহর উপাসনায় নিজেদের নিমগ্ন রাখবেন।
৯ জিলহজ শনিবার সন্ধ্যায়, হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করবেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটাবেন এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন। মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।
জামারাত আল-আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করার পর রোববার (১০ জিলহজ) সকালে ফজরের নামাজ শেষে আবার মিনায় ফিরে আসবেন হজযাত্রীরা। এরপর পশু কোরবানি করবেন তারা। এরপর তাওয়াফ আল-ইফাদাহ বা ফরজ তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে যাবেন। এই তাওয়াফ অবশ্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো সময় করতে পারবেন তারা। এ সময় তারা কাবা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করবেন এবং মাথা মুণ্ডন করবেন। একবার এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের আর ইহরামের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হবে না। তারা সব হালাল (অনুমতিযোগ্য) কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন।
হজের অবশিষ্ট আচারগুলো সম্পন্ন করতে হজযাত্রীদের অবশ্যই আবার মিনায় ফিরে যেতে হবে। তাশরিকের দিনগুলোতে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হজযাত্রীদের মিনায় আরও দুটি কাজ করতে হবে। ১১ জিলহজ বিকেলে হজযাত্রীরা ২১টি ছোট পাথর সংগ্রহ করে তিন জামারাতে নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শুরু হয় জামারাত আল-উলা দিয়ে, তারপর জামারাত আল-উস্তা এবং পরে জামারাত আল-আকাবা দিয়ে শেষ হয়।
মক্কা থেকে যাত্রা করার আগে হজযাত্রীদের তাওয়াফ আল-বিদা করতে হবে, যা বিদায়ী তাওয়াফ নামেও পরিচিত। এটি হজ সম্পন্ন করায় অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং সব হজযাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
সৌদি কর্মকর্তারা বলেছেন, এ বছর হজযাত্রীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছেন তারা। ২০২৩ সালে ১৮ লাখের বেশি লোক হজ করতে দেশটিতে জড়ো হয়েছিলেন। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে ২৪ লাখের বেশি মুসলমান হজে অংশ নেন।
একুশে সংবাদ/এ.টি/সা.আ