ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সাধারণ মানুষের জন্য এখন আর কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। ত্রাণকেন্দ্র, হাসপাতাল এমনকি ইন্টারনেট ক্যাফের মতো জায়গাতেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোমবার (৩০ জুন) এমন হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি।
গাজার সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় আল-বাকা নামের একটি ক্যাফেতে বিমান হামলায় নিহত হন অন্তত ৩৯ জন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন নারী, শিশু এবং সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব। ওই সময় সেখানে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ক্যাফেটি ছিল আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যতম ভরসাস্থল—যেখানে মানুষ মোবাইল চার্জ দিত, ইন্টারনেট ব্যবহার করত। কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই হঠাৎ হামলা চালায় যুদ্ধবিমান, যা পুরো এলাকা কাঁপিয়ে দেয়।
খাবার সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষের ওপরও চালানো হয়েছে গুলি ও হামলা। বিভিন্ন সূত্র বলছে, খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে একাধিক জায়গায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৩ জন। গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে ত্রাণকেন্দ্র থেকে ফেরার পথে আরও অন্তত ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা চলছিলাম, হঠাৎ দেখি সামরিক যান এসে পড়ে, প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি, পরে সরাসরি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।”
গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে অবস্থিত আল-আকসা হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া হাজারো মানুষের নিরাপত্তাও আজ হুমকির মুখে। সোমবার হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই হামলা চালানো হয়, যাতে আহত হন বহু মানুষ।
আল-জাজিরার সাংবাদিক জানায়, এটি প্রথমবার নয়—এ হাসপাতাল লক্ষ্য করে এর আগেও অন্তত ১০ বার হামলা হয়েছে।
একইদিন গাজার জয়তুন এলাকায় খাদ্য গুদামে হামলায় নিহত হন অন্তত ১৩ জন। ইয়াফা স্কুলেও হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী, যেখানে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছিল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। সেখানে হামলার আগে মাত্র ৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য।
একদিকে যখন ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে গাজার প্রতিটি এলাকায় চলছে বিমান ও স্থল অভিযান। গাজা শহরের বাসিন্দারা বলছেন, তারা প্রতিদিন শুধু বিস্ফোরণ আর মৃত্যুর শব্দ শুনছেন—যুদ্ধবিরতির খবর যেন তাদের কাছে শুধু সংবাদপত্রেই সীমাবদ্ধ।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন করে জনগণকে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে। আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ মাসে গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন হয় ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন, না হয় উচ্ছেদের ঝুঁকিতে।
এ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন আলোচনার লক্ষ্যে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসর এই শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। তবে এখনও পর্যন্ত আলোচনার কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নির্ধারিত হয়নি।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, তবে জনগণের নিরাপত্তা ও সম্মানের ভিত্তিতে সমঝোতা হওয়া জরুরি।
একুশে সংবাদ/এন.ট/এ.জে