ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার সামরিক হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ১২০ জন, আহত হয়েছেন ৩৫০-এর বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে খাদ্য সংগ্রহে আসা সাধারণ মানুষও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (১৩ জুন) প্রকাশিত একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার বিভিন্ন স্থানে চালানো বিমান হামলা ও গুলিবর্ষণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) পরিচালিত বিতরণকেন্দ্রগুলোকেই মূলত হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এসব বিতরণকেন্দ্র ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থিত, যেখানে প্রায়শই ত্রাণ সংগ্রহের সময় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত একদিনেই অন্তত ৫৭ জন ত্রাণপ্রার্থী নিহত এবং ৩৬০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। গত ২৭ মে থেকে বিতরণকেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার পর সেখানেই নিহত হয়েছেন ২২০ জনের বেশি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “নেৎসারিম করিডোর এলাকায় সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছিল”, তবে এ গুলিতে অসংখ্য বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছে বলে ধারণা।
জিএইচএফ-এর বিতরণব্যবস্থাকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সফল উদ্যোগ বলে দাবি করলেও মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ এটিকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘ বলেছে, তারা এই বিতরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না, কারণ এতে মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং সামরিকভাবে সহায়তাপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা জড়িত রয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ (জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা) বলেছে, “জিএইচএফ পরিচালিত ব্যবস্থা ত্রাণ নয়, বরং মানবিক বিপর্যয়কে ঢাকতে গঠিত একটি বিতর্কিত কাঠামো।” সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, তারা এবং অন্যান্য সংস্থা গাজায় সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত থাকলেও ইসরায়েল তাদের বাধা দিচ্ছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস অভিযোগ করেছে, “ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও খাদ্য সংকট তৈরি করে গাজাবাসীকে অনাহারে মারার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।” আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ক্রিস নিউটন বলেছেন, গঠিত বিতরণব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খল এবং জনগণকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ তৈরি করছে।
জিএইচএফ প্রতিদিন মাথাপিছু মাত্র ১,৭৫০ ক্যালরি সরবরাহ করছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক মানদণ্ডের চেয়েও নিচে এবং ২০০৮ সালে ইসরায়েলের নিজস্ব নির্ধারিত মানেরও নিচে বলে উল্লেখ করেন নিউটন।
গাজায় প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। যুদ্ধ নয়, খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। আন্তর্জাতিক মহলের কড়া সমালোচনার মুখেও অবরোধ ও সহিংসতা থেমে নেই। গাজার মানবিক বিপর্যয় এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
একুশে সংবাদ/ ঢ.প/এ.জে