ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ শুক্রবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আটক অবশিষ্ট ইসরাইলি জিম্মিদের হামাস মুক্তি না দিলে গাজা উপত্যকার কিছু এলাকা তাদের নিজেদের দখলে নেয়া হবে।জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরাইল মঙ্গলবার থেকে নতুন করে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই হুমকি দেওয়া হলো। যুদ্ধবিরতি আলোচনার সাথে ঘনিষ্ঠ একটি ফিলিস্তিনি সূত্র শুক্রবার রাতে এএফপিকে জানিয়েছে যে হামাস ’একটি সম্মত সময়সীমা অনুসারে’ যুদ্ধবিরতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের জন্য জিম্মি বিনিময়ের জন্য মধ্যস্থতাকারী মিশর এবং কাতারের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে যে প্রস্তাবটিতে `গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে’, যা গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল কর্তৃক অবরুদ্ধ। চলতি মাসে প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে পরোক্ষ আলোচনায় অচলাবস্থার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরাইল।
অঞ্চলটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে যে শুক্রবার ইসরাইলি হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। ভোরবেলা হামলায় তিনজন এবং দিনের বেলায় আরো আটজন নিহত হয়।বৃহস্পতিবার, বোমাবর্ষণ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে ৫০৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে সংস্থাটি। যা ১৭ মাসেরও বেশি সময় আগে ইসরাইলের ওপর হামাসের আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে কাটজ বলেছেন: ’আমি (সেনাবাহিনীকে) গাজার আরো বেশি অঞ্চল দখল করার নির্দেশ দিয়েছি। হামাস যত বেশি জিম্মিদের মুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানাবে, তত বেশি অঞ্চল হারাবে। যা ইসরাইলে সাথে যুক্ত করা হবে।
হামাস যদি তা না মানে, তাহলে কাটজ ’গাজার চারপাশে বাফার জোন সম্প্রসারণের হুমকি দিয়েছেন। যাতে ইসরাইলি বেসামরিক জনগোষ্ঠী এবং সেনাদের সুরক্ষা দেওয়া যায় এবং এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে ইসরাইলি দখলদারিত্ব কার্যকর করা যায়।
শুক্রবার দক্ষিণ গাজার আল-সালাতিন, আল-কারামা এবং আল-আওদা এলাকার বাসিন্দাদের হুমকির মুখে তাদের বাড়িঘর খালি করার নির্দেশ জানিয়েছে সেনাবাহিনী। উত্তর গাজা থেকে এএফপির ছবিতে দেখা গেছে যে ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তা ধরে বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে গাধার গাড়িতে করে জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলি বাহিনী শুক্রবার জানিয়েছে যে তারা দক্ষিণ গাজায় হামাসের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানকে একদিন আগে এক হামলায় হত্যা করেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এটিই সর্বশেষ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে হামলা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সাথে সমন্বিতভাবে ইসরায়েলের বৃহৎ আকারের সামরিক হামলা পুনরায় শুরু করা ব্যাপক নিন্দার জন্ম দিয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং নতুন হামলাকে ’একটি নাটকীয় পদক্ষেপ পিছিয়ে যাওয়া’ বলে অভিহিত করেছেন।তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজায় তুরস্কের নির্মিত একটি হাসপাতালে ইসরাইলের ’ইচ্ছাকৃত’ হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
’তুরস্কের অভিযোগ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে একজন সামরিক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, আইডিএফ (সামরিক বাহিনী) হামাসের একটি সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে সন্ত্রাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, যা পূর্বে গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে একটি হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
এক বিবৃতিতে, হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ’তুর্কি-ফিলিস্তিনি মৈত্রী হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে দখলদার (ইসরাইল) কর্তৃক সংঘটিত জঘন্য অপরাধের’ নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে ’গাজা উপত্যকার ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য মনোনীত একমাত্র হাসপাতাল’ বলে অভিহিত করেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জেরুজালেমে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমাবেশ করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জিম্মিদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করেই সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার অভিযোগ তুলেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় আটক ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৫৮ জন এখনও গাজা জঙ্গিদের হাতে বন্দী। যার মধ্যে ৩৪ জন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মতে মারা গেছেন।
একুশে সংবাদ/ এস কে