AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ভয়াবহ পরিস্থিতি দিকে বিশ্ব


Ekushey Sangbad
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২:২৩ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ভয়াবহ পরিস্থিতি দিকে বিশ্ব

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় জাতিসংঘসহ সারা পৃথিবী। গত ২ বছরের বেশী সময় ধরে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে পরাশক্তিগুলি দ্বিধাবিভক্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশ নানা মেরুকরণে ব্যস্ত। পৃথিবীর দুই প্রান্তে যুদ্ধ-সংঘাত , অস্থিরতা জনমনে তৈরি করছে ভয়াবহ শঙ্কা। মারনাস্ত্রের প্রতিযোগিতা ,আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্খা বিশ্বকে ঠেলে দিচ্ছে আরেকটি যুদ্ধের দিকে। এই নিয়ে নানা সমীকরণ বিশ্লেষকদের। তাহলে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন? আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে উঠে এসেছে সেইসব তথ্য।

নজিরবিহীন হামলার পর এবার ইসরায়েলকে কঠোর হুমকি দিলো ইরান। চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে তেহরান। ইরানের রাজনীতিবিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি এই হুমকি দিয়েছেন বলে আজ মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়। আলি বাঘেরি কানি বলেন, ইসরায়েল যদি পাল্টা হামলা চালায়, ইরান কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জর্ডানের সাহায্য নিয়ে ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলার বেশির ভাগই রুখে দেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল।

এপ্রিলে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে তেহরান। বদলা হিসেবে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতভর ইসরায়েলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গত রোববার বলে, ইরান থেকে প্রায় ৩৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়েছিল।

আইডিএফের ভাষ্য, একটি সফল প্রতিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে ইরানি হামলা ৯৯ শতাংশ পথিমধ্যে রুখে দেওয়া হয়েছে। এই কাজে ইসরায়েলের খরচ দাঁড়াতে পারে ৮০০ মিলিয়ন পাউন্ড। তবে তারা অনেক জীবন বাঁচিয়েছে। একই সঙ্গে ইরানের সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। ইরানের সামরিক পরিকল্পনাটিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হামলার কৌশলের মতো মনে হয়। তেহরান ব্যাপক মাত্রায়, জটিল আক্রমণের কৌশলের মাধ্যমে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পরাভূত করার চেষ্টা করছিল। ইসরায়েলে হামলায় তুলনামূলক ধীরগতির ড্রোন ব্যবহার করে ইরান। আবার তারা দ্রুতগতির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। পাশাপাশি ছিল উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। যদিও ইরানের হামলার বিষয়টি আগেই জানা গিয়েছিল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান গতকাল বলেন, হামলার বিষয়ে তাঁরা প্রতিবেশী দেশগুলোকে আগেই সতর্ক করেছিল। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে তারা নোটিশ দিয়েছিল।

ইরানে পাল্টা হামলা নিয়ে বাইডেনের ভাবনা জানালেন মার্কিন কর্মকর্তা:

ইসরায়েলে চালানো ইরানের এই হামলায় কী কী অস্ত্র কতটা ব্যবহার করা হয়েছিল, তা নিয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। তবে সে সময় ইরান দুই বা তিন ডজন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক সিদ্ধার্থ কৌশল বলেন, ইরানের সর্বশেষ এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি করা। কিন্তু তা হয়নি। ফলে তা ইরানের সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। রাতের বেলার এই হামলায় ব্যবহৃত ধীরগতির ইরানি ড্রোনগুলো প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য জরুরি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা প্রায় ৭০টি ইরানি ড্রোন ও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে।

ইরানের হামলায় কত ক্ষয়ক্ষতি, জানাল ইসরায়েলি বাহিনী :

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তাঁর দেশের রয়্যাল এয়ারফোর্সও হামলা প্রতিহত করেছে। তবে সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি। বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র জর্ডান তার আকাশসীমায় কয়েক ডজন ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সিদ্ধার্থ কৌশল বলেন, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র ধ্বংসের জন্য একত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্ক পরিকল্পনার দরকার পড়ে। কাজটি জটিল। একটি বহুজাতিক বাহিনী এই কাজটি করেছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বহীন উপায়ে তাদের এই কাজটি করতে হয়েছে। হামলা প্রতিহতের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অস্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এখানে যেমন ধীরগতির ড্রোন ছিল, আবার ছিল উচ্চ উচ্চতার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, হামলা চালাতে ইরান থেকে ১৭০টি ড্রোন পাঠানো হয়েছিল। এগুলো সম্ভবত শাহেদ ঘরানার ড্রোন। ইসরায়েলের আকাশসীমায় পৌঁছানোর আগেই এগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল। ইরানের ড্রোন প্রতিহত করার জন্য ইসরায়েল যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। ধীরগতির এই ড্রোনগুলোর ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগে। তবে কিছু ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরান এই হামলায় দ্রুতগতির ড্রোনও ব্যবহার করেছিল। ইরানের হামলা রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশের হঠাৎ অংশগ্রহণ চমক হতে পারে। তবে এই হামলা ঠেকাতে পরিকল্পনা করার জন্য অনেক সময় পেয়েছে ইসরায়েল ও তার মিত্ররা। তেহরানের বদলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম সতর্ক করার ১০ দিন পর ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হামলা ঠেকানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর শুরু করেছিল। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান। এর মধ্যে ২৫টিকে ইসরায়েলি আকাশসীমার বাইরেই রুখে দেয় আইডিএফ। ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র এ কথা বলেছেন। ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে গুরুতর হুমকি ছিল উচ্চ গতির ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো ১৫ মিনিটের কম সময়ে ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছাতে সক্ষম। ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারির ভাষ্য, ইরান থেকে এ ধরনের ১২০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। তিনি স্বীকার করেন, কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশসীমা অতিক্রম করেছিল। কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে।

এসব অস্ত্র মোকাবিলা করাটা ছিল মূলত ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কাজ। এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রকেট নির্ভর। আগুয়ান ক্ষেপণাস্ত্রকে আঘাত করে ধ্বংস করে এই রকেট। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করাটা অ্যারো ২ ও অ্যারো ৩ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক কাজ। নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের মতে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিণতি কী হতে পারে, তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে ইসরায়েল ঠিক কীভাবে ১৩ এপ্রিল রাতে চালানো হামলার জবাব দেয়, তার ওপর। তিনি আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যে ও বিশ্বের অন্যত্রও বহু দেশই এই পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে এমন অনেক দেশও আছে, যারা ইরানের সরকারকে ঘোরতর অপছন্দ করে। কিন্তু এখন তারাও চাইছে ইসরায়েল যেন নতুন করে এই হামলার জবাব না দেয়।

অন্যদিকে ইরানের মনোভাবও অনেকটা এই ধরনের : অ্যাকাউন্ট সেটলড মানে শোধবোধ হয়ে গেছে। বিষয়টার এখানেই ইতি টানলেই ভালো। তবে হ্যাঁ, যদি আবার আমাদের বিরুদ্ধে পালটা আঘাত হানতে যাও সে ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অনেক বেশি শক্তিশালী হামলা চালাব যেটা প্রতিহত করা তোমাদের সাধ্যে কুলোবে না—ইরানের এমন মানসিকতার ব্যাখ্যা করেছেন ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার। যদিও ইসরায়েলের হামলার পরিণতিতে ইরানের কর্তৃপক্ষ তো বটেই, দেশের সাধারণ মানুষও বেশ খুশি। তেহরানের রাস্তায় নেমে তারা উল্লাস প্রকাশও করেছেন। তবে ইসরায়েল যদি নতুন করে আর হামলা না-চালায়, তাহলে ব্যাপারটা এখানেই মিটে যাওয়া ভালো এমন একটা মানসিকতাও তেহরানের কাজ করছে। কিন্তু ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ‘রীতিমতো কড়া জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তাকে অনেকেই সে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কট্টরপন্থি’ বা হার্ডলাইন সরকার বলে বর্ণনা করে থাকেন।

গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের চালানো অতর্কিত হামলার জবাব দিতে ইসরায়েল সময় নিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপর ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা একটানা গাজা ভূখণ্ডে তীব্র অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে গাজাকে যেন তারা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাইছে। ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের মতে, ইসরায়েলের ‘ওয়ার ক্যাবিনেট’ বা যুদ্ধ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ইরানের এই প্রত্যক্ষ হামলার কোনো জবাব না-দিয়ে হাত গুটিয়ে থাকবে, এই সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তাহলে ইসরায়েলের সামনে এখন কী কী রাস্তা বা ‘অপশন’ খোলা আছে?

প্রথমত, হতে পারে তারা ঐ অঞ্চলে তাদের প্রতিবেশীদের কথায় আমল দেবে এবং একটা ‘কৌশলগত ধৈর্য প্রদর্শনে’র রাস্তায় হাঁটবে। এর অর্থ হলো—তারা সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পালটা হামলা না চালিয়ে ঐ অঞ্চলে ইরানের যেসব শরিকরা আছে তাদের ওপর অভিযান চালাবে। এর মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠী কিংবা সিরিয়ায় ইরানের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ কেন্দ্রগুলো যার বিরুদ্ধে ইসরায়েল বহু বছর ধরেই হামলা চালিয়ে আসছে।

দ্বিতীয়ত, ইরান যে ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পালটা ঠিক সেই ধরনের ‘সাবধানে ও মেপে মেপে’ হামলা চালাতে পারে যার নির্দিষ্ট লক্ষ্য হবে ইরানের সেই মিসাইল ঘাঁটিগুলো, যেখান থেকে সেদিন রাতে হামলা চালানো হয়েছিল। তবে ইসরায়েল যদি এই অপশনটা বেছে নেয়, তাহলে ইরান সেটাকেও যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবেই দেখবে। কারণ বহু বছরের বৈরিতা সত্ত্বেও ইসরায়েল ইতিপূর্বে কখনোই সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে কোনো হামলা চালায়নি। বরং তারা ঐ অঞ্চলে ইরানের সঙ্গী বা প্রক্সি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে আক্রমণেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে।

তৃতীয় পথ হতে পারে, ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টায় আরো এক ধাপ এগিয়ে ইরান যেভাবে হামলা চালিয়েছে তার চেয়ে অনেক শক্তিশালী পালটা হামলা চালাল। সেক্ষেত্রে তারা শুধু নির্দিষ্ট মিসাইল ঘাঁটিই নয়, ইরানের অত্যন্ত শক্তিশালী রিভোলিউশনারি গার্ডের ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির ও কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারগুলোকেও আক্রমণের নিশানা করবে। ইসরায়েল যদি এই শেষ দুটো অপশনের কোনো একটা বেছে নেয়, তাহলে ইরানকেও অবশ্যই আবারও পালটা আঘাত হানার পথে যেতে হবে।

আর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, এই সংঘাতে কি আমেরিকাও জড়িয়ে পড়তে পারে? পরিস্থিতি কি এমন দাঁড়াতে পারে, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী আর ইরানের মধ্যেও পুরোদস্তুর গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়? কেননা, উপসাগরীয় আরব অঞ্চলের ছয়টি দেশেই কিন্তু মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে। এছাড়াও তাদের সামরিক ঘাঁটি আছে সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানেও। বহু বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান যে ব্যালিস্টিক ও অন্য নানা ধরনের মিসাইলের বিপুল ভান্ডার তৈরি করেছে, মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটিগুলো সেই সব ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানায় পরিণত হতে পারে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরেই আর একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে তারা যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথটি যদি ইরান মাইন, ড্রোন ও ফাস্ট অ্যাটাক ক্র্যাফট দিয়ে বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম ব্যস্ত রুটটি অচল হয়ে পড়বে এবং বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের এক-চতুর্থাংশ বন্ধ হয়ে যাবে। অবধারিতভাবে সেটা হবে একটা দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি। ইরানের রিভোলিউশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালানোর পর ইরানে সরকারের সমর্থক বহু মানুষ তেহরানের রাজপথে নেমে এসে আনন্দোল্লাস করতে থাকেন। মধ্যপ্রাচ্যে যেসব দেশ ইরানের মিত্র বা শরিক হিসেবে পরিচিত, তাদের মধ্যে এবং ইরানের ভেতরেও সমর্থকদের মধ্যে আইআরজিসি-র গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য এই হামলা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি জানান, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যেসব নিশানাকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছিল তার মধ্যে সে দেশের নোটাম বিমান বাহিনী ঘাঁটিও ছিল। দুই সপ্তাহ আগে যে ইসরায়েলি এফ-৩৫ বিমানগুলোর চালানো হামলায় দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে সাত জন আইআরজিসি কমান্ডার নিহত হন, সেই যুদ্ধবিমানগুলো এই ঘাঁটি থেকেই উড়ে গিয়েছিল। মেজর জেনারেল বাঘেরি এটাও জানিয়েছেন, ইরান তাদের ‘লক্ষ্য অর্জন করেছে’ এবং অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায় তাদের নেই। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, নতুন করে কোনো হামলা চালানো হলে ইরান তার অনেক কঠোর প্রত্যুত্তর দেবে। এছাড়া সে দেশের শীর্ষ সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের কথাবার্তা থেকে মনে হচ্ছে তারা হামলার পরিণামে ‘সন্তুষ্ট’। কিন্তু ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, তা কোনো একটি পক্ষের ওপর নির্ভর করছে না তাই আপাতত সারা দুনিয়াকেই পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখতে হবে।ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় যেকোনো উত্তেজনা এড়াতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা মিত্ররা। ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনসহ পশ্চিমা মিত্ররা এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে ইসরায়েলকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। খবর বিবিসির।

এদিকে ইরানের ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়াও সতর্ক করে বলেছে, এই অঞ্চলেন উত্তেজনা বাড়ানো কারো স্বার্থ নয়। কারণ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন বিবিসিকে বলেছেন, ইরানের হামলা প্রায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং ইসরায়েলকে ‘স্মার্টের পাশাপাশি কঠোর’ হওয়া উচিত। ইসরায়েলের ওপর হামলা ব্যর্থ হওয়ার পর ইরান ‘দ্বৈত পরাজয়ের’ সম্মুখীন হয়েছে এবং বিশ্বের কাছে তার আসল চেহারা দেখিয়েছে। ক্যামেরন জোর দিয়ে আরও বলেছেন, যুক্তরাজ্যের প্রচেষ্টা গাজায় যুদ্ধে বিরতি এবং সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে মনোনিবেশ করছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য খাদের কিনারায় রয়েছে। এখনি উত্তেজনা প্রশমিত করার সময়। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। কারণ সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে পর্যাপ্ত সরবরাহ বেসামরিকদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। তেহরান শনিবার ইসরায়েলে ৩০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এটিকে সিরিয়ায় তার কনস্যুলেটে হামলার প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করেছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, আঞ্চলিক সংঘর্ষ এড়াতে ফ্রান্স যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।

ইরানের আক্রমণের পর ইসরায়েলকে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা দিতে মার্কিন কংগ্রেসের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন আইনপ্রণেতারা। রিপাবলিকানরা বলছে, তারা আগামী দিনে প্রতিনিধি পরিষদে ভোট ডাকবে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন হাউসকে ইসরায়েল, ইউক্রেন ও তাইওয়ানের জন্য ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে কিয়েভের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখার বিরোধিতার কারণে তহবিল স্থগিত করেছে। কিরবি এনবিসিকে বলেছেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিল পাস করা উচিত। গত রাতে অবশ্যই ইসরায়েল প্রতিবেশীর খুব কঠিন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ভোট হবে, আমরা শুধু স্পিকারের অফিসের বাইরে নেতৃত্ব খুঁজছি।’এক বিবৃতিতে সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, বিলটি ইসরায়েল এবং এই অঞ্চলে আমাদের নিজস্ব সামরিক বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থান সরবরাহ করবে। এতে ইউক্রেনের পাশাপাশি এশিয়ার দুর্বল মিত্ররা উপকৃত হবে আর চীনকে সুযোগ নেওয়া থেকে বিরত রাখবে। আর এটা আমাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্প ঘাঁটিতে জরুরি বিনিয়োগ। কয়েক মাস ধরে হাউস স্পিকার মাইক জনসন পার্টির থেকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত ট্রাম্পের বিরোধিতার মুখে ভোটের জন্য সিনেট বিলটি উত্থাপন করতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ইসরায়েলের ওপর ইরানের আক্রমণ ও ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রগতির কারণে কংগ্রেস শিগগিরই বিস্তৃত বিদেশি সহায়তা প্যাকেজ পাস করতে পারে।

জনসন ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, তিনি এবং ট্রাম্প এই বড় এজেন্ডাগুলোতে শতভাগ সম্মত। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অর্থ প্রদানে সহায়তা করার জন্য দুর্নীতিগ্রস্ত রাশিয়ান ধনকুবেরদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে বিমান চলাচলের বিকল্প রুটগুলো আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। এতে সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে ফ্লাইট সমস্যায় পড়েছে বৈশ্বিক বিমান সংস্থাগুলো।

ইরানের হামলার ফলে বিমান শিল্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে:

ইসরায়েলের ওপর ৩০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা করেছে ইরান। তবে ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা যৌথ প্রচেষ্টায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইরানের হামলার ফলে বিমান শিল্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কান্তাস, জার্মানির লুফথানসা, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও এয়ার ইন্ডিয়াসহ অন্তত এক ডজন এয়ারলাইনসকে গত দুই দিনে ফ্লাইট বাতিল বা পুনরায় রুট করতে হয়েছে। ওপিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জির মতে, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১-এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পর এটিই বিমান ভ্রমণে সবচেয়ে বড় একক বাধা। প্রতিষ্ঠানটি আকাশপথ ও বিমানবন্দরগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। জি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘২০০১ সালের পর থেকে আকাশ পথে আমাদের এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। এই সমস্যা আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।’ ইরানের আকাশসীমা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে ভ্রমণকারী এয়ারলাইনগুলো ব্যবহার করে। এগুলো এখন তুরস্কের মাধ্যমে বা মিসর ও সৌদি আরবের মাধ্যমে দুটি কার্যকর বিকল্প রুটে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জি। ইসরায়েল শনিবার তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় তবে রোববার সকালে সেগুলো আবার খুলে দেয়। জর্ডান, ইরাক ও লেবাননও তাদের ভূখণ্ডে আবার ফ্লাইট চালু করেছে। এমিরেটস এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ ও ইতিহাদ এয়ারওয়েজসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান এয়ারলাইনসগুলো  বলেছে, তারা কিছু ফ্লাইট বাতিল বা পুনরায় রুট করার পরে এই অঞ্চলে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করবে। সাম্প্রতিক এই সমস্যা যাত্রীদের চাহিদায় প্রভাব ফেলবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। কেননা ইউক্রেন ও গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে এতে তেমন বড় কোনো প্রভাব পড়েনি বলে বিমান বিশ্লেষক ব্রেন্ডন সোবি বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে তবে এক পর্যায়ে লোকেরা ভ্রমণের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হবে, তবে এখন পর্যন্ত তা ঘটেনি। ১৩ এপ্রিল ইরান থেকে ইসরায়েলে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়। তবে এগুলো যেন ইসরায়েল পর্যন্ত না পৌঁছায় সেই চেষ্টা করেছে জর্ডান। আত্মরক্ষার জন্য এটি করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জর্ডান সরকার।

জর্ডান ইরানের হামলা ঠেকানোয় ব্যাপক প্রতিক্রয়া :

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জর্ডানের নাগরিকেরা তাদের সরকারের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন। হুসেইন নামে দেশটির একজন রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘জর্ডান যেভাবে ইসরায়েলকে রক্ষা করেছে তাতে আমি খুবই বিরক্ত৷’ বিপদের আশঙ্কা থাকায় তিনি তার পুরো নাম উল্লেখ করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এখানকার অনেকেই এটা মেনে নিচ্ছে না। আমরা ইরানকে সমর্থন করি না। গাজায় এখন যা ঘটছে তার পেছনে ইরানের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করি। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এমন যে কোনো পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা আছি। মারিয়াম নামে আম্মানের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ‘জর্ডানে ইরানের জনপ্রিয়তা নেই। কিন্তু আমি ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র জর্ডানের বাধা দেওয়া ও অনিচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া প্রত্যাখ্যান করি।’ আম্মানের সামরিক বিশ্লেষক মাহমুদ রিদাসাদ বলেন, সপ্তাহান্তে যে ঘটনা ঘটেছে তাকে ‘কখনও ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য করা হয়েছে তেমনটা বলা যাবে না, বরং জর্ডানের সার্বভৌমত্ব এবং আকাশসীমা রক্ষার জন্য করা হয়েছে’৷  কারণ, ড্রোন বা মিসাইল কোথায় পড়বে তা জানা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে জর্ডান সহায়তা করেছে বলে ইসরায়েলের গণমাধ্যমে খুশির খবর প্রকাশ সম্পর্কে রিদাসাদ বলেন, ‘এটা ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছু নয়।’ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশ্লেষক তাহানি মুস্তফা জানান, ১ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে জর্ডানের নাগরিকেরা বিভক্ত। কারণ, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে মানুষ বিস্তারিত জানে না, কারণ এসব বিষয় নিয়ে এখানে বেশি লেখা হয় না,’ বলে জানান তিনি। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে জর্ডানের সংসদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে সমালোচনা রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য, পরিবহন ও বিমান বাধা ছাড়াই জর্ডানে ঢুকতে ও ঘুরে বেড়াতে পারবে। গাজা নিয়ে আম্মানে বিক্ষোভ শুরুর পর অনেকে জর্ডান থেকে মার্কিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন মুস্তফা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান।

ইউকেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখন কোন পথে ?

ইউক্রেনে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান। এ যুদ্ধে পশ্চিমা সহায়তাপুষ্ট ইউক্রেন বাহিনী একসময় বেশ অগ্রগতি দেখিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি তেমন নেই। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট ফোর্সেসের সাবেক কমান্ডার জেনারেল স্যার রিচার্ড ব্যারনসের আশঙ্কা, চলতি বছরেই ইউক্রেন যুদ্ধে পরাজিত হতে পারে। এমন আশঙ্কার কারণ কী? রিচার্ড ব্যারনসের ভাষ্যমতে, ‘একটা পর্যায়ে ইউক্রেন বুঝতে পারবে, তারা এই যুদ্ধে জয় পাবে না। আর সেই পর্যায়ে পৌঁছালে কেনই–বা দেশটির মানুষ লড়াই করতে চাইবে? আরও মরতে চাইবে শুধুই অপ্রতিরোধ্যকে প্রতিরোধ করার জন্য?’ ইউক্রেনে সেই পর্যায় এখনো আসেনি। তবে দেশটির সেনাসদস্য, অস্ত্রশস্ত্র ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে। রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলো উদ্ধার করতে গত বছর তারা যে পাল্টা হামলা শুরু করেছিল, তা-ও ব্যর্থ হয়েছে। মস্কো এখন আগামী গ্রীষ্মে জোর হামলার তোড়জোড় শুরু করেছে।

রিচার্ড ব্যারনসের ভাষ্যমতে, রাশিয়া যে হামলা চালাতে যাচ্ছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে যুদ্ধের সম্মুখসারিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে রুশ বাহিনী। কামান ও গোলাবারুদের দিক দিয়েও ইউক্রেনের চেয়ে বহু এগিয়ে রয়েছে তারা। নিত্যনতুন অস্ত্র ব্যবহারের কারণে রুশ সেনারা চাঙাও হয়ে উঠছেন। নতুন এই অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এফএবি গ্লাইড বোমা। সোভিয়েত আমলে ‘ডাম্ব বোম্ব’ নামে পরিচিত একটি বোমায় পাখা লাগিয়ে ও জিপিএস ব্যবস্থা যুক্ত করে উন্নত করা হয়েছে। এই বোমার বিস্ফোরকের ওজন দেড় হাজার কেজি। এফএবি গ্লাইড বোমার ব্যবহার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তছনছ করে দিয়েছে। চলতি বছরের গ্রীষ্মে রাশিয়া বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে ব্যারনস বলেন, যদি এমনটি ঘটে, তাহলে ইউক্রেন বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে রুশ বাহিনীর প্রবেশের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। আর তারা হয়তো এমন সব এলাকায় পৌঁছে যাবে, যেখানে ইউক্রেন বাহিনীর সক্ষমতা নেই তাদের থামানোর।
এখানে একটা প্রশ্ন আসে, তা হলো, সেই এলাকাগুলো কোথায়? গত বছর রুশ বাহিনী জানত ইউক্রেনীয়রা কোথায় হামলা চালাতে পারে। সে অনুযায়ী তারা পরিকল্পনা করে ইউক্রেনের অগ্রগতি সফলভাবে থামিয়ে দিয়েছিল। তবে নৌকার হাল এখন মস্কোর হাতে। ইউক্রেনে তারা সেনাসংখ্যা বাড়িয়েছে। এখন কিয়েভই উল্টো চিন্তায় পড়েছে—রাশিয়া কোথায় হামলা চালাতে পারে।

লন্ডনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসই) জ্যেষ্ঠ গবেষক জ্যাক ওয়াটলিং বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের সম্মুখসারি অনেক দীর্ঘ। এই সম্মুখসারি রক্ষার সক্ষমতা থাকতে হবে ইউক্রেনের। তাদের তা নেই। ফলে ইউক্রেন বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। প্রশ্ন হলো, কতটা অঞ্চল এর শিকার হতে যাচ্ছে? ইউক্রেনের কোন অঞ্চলে রাশিয়া শক্তি প্রয়োগ করবে, সে বিষয়ে হয়তো রুশ সামরিক কর্মকর্তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে এ অঞ্চলগুলোকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর খারকিভ। অবস্থান রুশ সীমান্তের খুব কাছে। তাই মস্কোর জন্য শহরটি একটি লোভনীয় নিশানা হতে পারে। জ্যাক ওয়াটলিংয়ের মতে, খারকিভ অনেক নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। এখন প্রতিদিনই খারকিভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ বাহিনীর ড্রোন এবং ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে সেখানে পর্যাপ্ত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করতে পারেনি ইউক্রেন।

রিচার্ড ব্যারনস বলেন, এ বছর রাশিয়ার মূল লক্ষ্য হবে দনবাস দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল। এরপর তাদের নজর থাকবে খারকিভে। শহরটি রাশিয়া সীমান্ত থেকে মাত্র ২৯ কিলোমিটার দূরে। এই শহরের জয় রাশিয়ার জন্য বড় উপহার হবে।চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া প্রায় তিনবার বড় পরিসরের হামলা পরিচালনা করে। এই হামলায় শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল রাশিয়া। রাশিয়া এমন হামলা চালিয়েছিল, যা যেকোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্যই মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত।

পুতিনের এমন বিস্ময়কর উত্থানের রহস্য কোথায়?

পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো একত্রে দনবাস নামে পরিচিত। ২০১৪ সালে এ অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয় রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এরপর থেকেই তাদের সঙ্গে ইউক্রেন বাহিনীর সংঘাত চলছে। ২০২২ সালে গণভোটের আয়োজন করে দনবাস অঞ্চলকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেয় মস্কো। ১৮ মাস ধরে এ অঞ্চলেই বেশির ভাগ লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই অঞ্চলের দুটি শহর—বাখমুত ও আভদিভকা রক্ষার জোর চেষ্টা চালিয়েছিল ইউক্রেন। তবে দুটোই হারিয়েছে তারা। এ সময় নিহত হয়েছেন ইউক্রেনের সেরা সেনাদের বেশ কয়েকজন।রুশ সেনাদের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের একটি স্কুল। বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে বই। ইউরোপে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ক্রিস্টোফার কাভোলি সতর্কতা প্রকাশ করে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ না করে, তাহলে ইউক্রেন বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার তুলনায় বহু পিছিয়ে পড়বে। অনুপাতটা হতে পারে ১০-১।

দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া শহর যুদ্ধের সম্মুখসারির খুব কাছে। জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলের রাজধানী এই শহর। মস্কো জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করলেও রাজধানী শহরটি এখনো ইউক্রেনীয়দের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ইউক্রেনের হামলার আশঙ্কায় জাপোরিঝঝিয়ার দক্ষিণে গত বছর রাশিয়া যে অপ্রতিরোধ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, সেটাই এখন রাশিয়ার অগ্রগতির বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেখানে তিন স্তরের প্রতিরক্ষার মধ্যে বিপুল পরিমাণ মাইন স্থাপন করে রেখেছে রুশ বাহিনী। এর কিছুটা হয়তো তারা নিষ্ক্রিয় করতে পারে। তবে রাশিয়া এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে তা অবশ্যই ইউক্রেনীয়দের নজরে আসবে।

যদিও এ বছরে ইউক্রেনে রাশিয়ার কৌশলগত লক্ষ্য কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল ঘিরে না-ও হতে পারে। তারা যেটা করতে পারে তা হলো, ইউক্রেনের লড়াই করার স্পৃহা নস্যাৎ করে দেওয়া, আর ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের এটা মনে করানো যে এই যুদ্ধে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।


একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা

Link copied!