টানা ভারী বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও ভয়াবহ ভূমিধসে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ভারতের হিমাচল প্রদেশ। রাজ্যজুড়ে দুর্যোগে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৩ জন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও বহু মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, সেতু এবং বাড়িঘর।
শুক্রবার (৪ জুলাই) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে হিমাচলে বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। প্রদেশের রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি রুপির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রাদেশিক হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা মান্ডি, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৭ জন এবং নিখোঁজ আছেন আরও প্রায় ৪০ জন। অন্যান্য জেলার মধ্যে কাংরায় ১৩ জন, চাম্বায় ৬ জন, শিমলায় ৫ জন এবং বিলাসপুর, হামিরপুর, কুল্লু, লাহুল স্পিতি, সিরমাউর ও উনায়ও প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
প্রাদেশিক সরকার জানায়, দুর্যোগে ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, ধ্বংস হয়েছে শতাধিক বাড়ি এবং ভেসে গেছে অন্তত ১৪টি সেতু।
রাজ্যজুড়ে এখনো ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত সতর্কতা জারি রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হিমাচলের পাঁচ শতাধিক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বহু এলাকায়।
বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এনডিটিভি জানায়, দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৩০০ গবাদিপশু মারা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৬৪টি গরু। খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে, যা মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
হিমাচল রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিশেষ সচিব ডি.সি. রানা জানান, “আমাদের হাতে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি রুপির ক্ষতির হিসাব আছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে। আপাতত আমরা উদ্ধারকাজ ও পুনর্বাসনে মনোযোগ দিচ্ছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নদীর পানি ভয়ংকর গতিতে গ্রাম ও ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিচ্ছে, কাদামাটির ঢলে রাস্তা ও গাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে মানুষজন প্রাণ বাঁচাতে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।
অবিরাম বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
চলমান দুর্যোগে জনজীবনে যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা থেকে উত্তরণে রাজ্য প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে। স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং ত্রাণ বিতরণে কাজ করছে প্রশাসনের বিশেষ দলগুলো।
দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একুশে সংবাদ//ঢা.প//র.ন