ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাতে সাধারণ মানুষকে অনাহারে রাখাকে ইসরায়েল একটি যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরায়েল এখনও গাজার সাধারণ জনগণের ওপর ‘ক্ষুধা’কে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে, যা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যারই অংশ।
সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, “ইসরায়েল জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করছে। এটি এক ধরনের শারীরিক নিধনের কৌশল, যা গণহত্যার সংজ্ঞায় পড়ে।”
অ্যামনেস্টি জানায়, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে শিশুরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। টানা বোমাবর্ষণ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সহায়তা নিতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাচ্ছেন বা আহত হচ্ছেন—কখনও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে, কখনও রাস্তায়। রিপোর্টে বলা হয়, “ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণ কার্যক্রম এখন এক ধরনের ‘ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে, যেখানে ক্ষুধার্ত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।”
গাজার বাইরে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মেলায় সেগুলো ঢুকতে পারছে না।
অ্যামনেস্টির তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৬ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে। আরও বহু শিশু মৃত্যুবরণ করেছে প্রতিরোধযোগ্য অসুখে, যেগুলোর জন্য প্রয়োজন ছিল শুধু পর্যাপ্ত খাবার ও ওষুধ।
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে ৪ মাস বয়সী জিনান ইসকাফি নামে এক শিশুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়, যে দুধের অভাবে চরম অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মারা গেছে। গাজা শহর ও খান ইউনিসের হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষায় আসা শিশুদের অন্তত ১৫ শতাংশের মধ্যে মাঝারি থেকে গুরুতর অপুষ্টির লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক শিশু চিকিৎসা নেওয়ার পর আবারও অসুস্থ হয়ে ফিরছে, কারণ ক্যাম্পের বাসস্থান, খাবার ও স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা ভয়াবহ। নিজেরাও বাস্তুচ্যুত অনেক চিকিৎসক জানিয়েছেন, তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
অ্যামনেস্টি অভিযোগ করেছে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু ইসরায়েলের গণহত্যা থামাতে ব্যর্থ নয়, বরং তারা নীরব থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে দিচ্ছে।”
সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের জন্য সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং যেসব ইসরায়েলি কর্মকর্তা অপরাধে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।
একুশে সংবাদ//ঢা.প//র.ন