AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শ্রীমঙ্গলে কালিঘাট চা বাগানে শতবর্ষের স্বাক্ষী ট্রলি রোড


শ্রীমঙ্গলে কালিঘাট চা বাগানে শতবর্ষের স্বাক্ষী ট্রলি রোড

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এখনও শতবর্ষের স্বাক্ষী হিসেবে টিকে আছে শতাধিক ফুট লম্বা ট্রলি রোড। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলিমিটার দূরে অবস্থিত কালিঘাট ইউনিয়নের ফিনলে টি কোম্পানির কালিঘাট চা বাগানের পুরনো ব্রিজের ওপর থেকে ব্রিজের উত্তর দিকের কাচা সড়কের নিচে এখনও বিদ্যমান রয়েছে সেই বৃটিশ আমলের ট্রলি রোড। যেটা কয়লা ইঞ্জিন চালিত ট্রলি ছিল।

 

রোববার (১৬ জুলাই) সরেজমিন দেখা য়ায়, কালিঘাট চা বাগানের ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে ট্রলি রোডের সরাসরি সংযোগ ছিল রেলস্টেশনের ইয়ার্ড পর্যন্ত। শতাধিক ফুট লম্বা ট্রলি রোডটি এখনও শতবর্ষের অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে।

 

ভারতবর্ষে প্রথম চা চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে। আমাদের দেশে প্রথম চায়ের চারা রোপণ করা হয় ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত ভারতের চট্টগ্রামের কোদালায়। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময়ে এ অঞ্চলে উৎপাদিত চা আসাম হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো। তবে এ চা পাঠানো ছিল অসম্ভব কষ্টসাধ্য। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অনেকটা কণ্টকাকীর্ণ। ভারতে চা পরিবহন ছিল দুঃসাধ্য একটি কাজ।

 

ঊনবিংশ শতাব্দিতে আসামে উৎপাদিত চায়ের পরিবহন ছিল ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে। কলকাতা ও ডিব্রগড়ের মধ্যে প্যাডেলচালিত এক প্রকার স্টিমার চলাচল করত নদে। এ নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় হাজার মাইল। এ পথ অতিক্রম করতে প্যাডেলচালিত স্টিমারের লাগত ১৮ থেকে ২০ দিন। রেল যোগাযোগ স্থাপনের আগে দেশে বরাক নদ হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল চা পরিবহনের একমাত্র পথ। ছোট ছোট নৌকায় বিভিন্ন স্থান থেকে চা নিয়ে আসা হতো ব্রহ্মপুত্র নদে। সেখানে প্যাডেলচালিত স্টিমারে পাঠানো হতো গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত। চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা রেলপথে এনে চাঁদপুর রাখা হতো। চাঁদপুর থেকে স্টিমারে পাঠানো হতো গোয়ালন্দ ঘাটে। গোয়ালন্দ থেকে পূর্ববঙ্গ ব্রডগেজ রেলপথে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছানো হতো।

 

পূর্ববঙ্গ রেলপথের মাধ্যমে ডুয়ার্স থেকে লালমনিরহাট পর্যন্ত চা আসত। সেখানে আসাম-কলকাতা রেললাইনের সঙ্গে সংযোগ ছিল। এ লাইনটি সান্তাহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সান্তাহার থেকে তা শিলিগুড়ি হয়ে আগত ব্রডগেজ লাইনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সান্তাহারে চা পৌঁছানোর পর তা পুনরায় কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দেওয়া হতো। পরবর্তীকালে আসামে চা রোপণকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯১ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে বাংলার পুবদিকে প্রথমবারের মতো রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু করে। আখাউড়া-সিলেট রেলপথের আখাউড়া-কুলাউড়া-শাহবাজপুর-মহিষাধন (করিমগঞ্জ, ভারত) রেলপথের অংশ হিসেবে ১৮৯৬ সালে রেলপথ তৈরি সম্পন্ন হয়। আর কুলাউড়া থেকে সিলেট রেলপথটি ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক তৈরি করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সে সময় থেকে সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত চা রেলযোগে পাঠানো হতো।

 

সিলেট অঞ্চলের চা প্রেরণে যুগান্তকারী কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দেখা দেয় নতুন সমস্যা। ঘন ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং সীমান্তবর্তী চা বাগানগুলো থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত চা আনার একমাত্র উপায় ছিল গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি। অনেক বাগানের রাস্তাঘাট এতই খারাপ ছিল যে চা-শ্রমিকরা মাথায় করে চায়ের চালান নিয়ে আসতো রেলস্টেশন পর্যন্ত।

 

১৯২০ সালের দিকে চা শিল্পাঞ্চলে আবিষ্কৃত হয় নতুন এক পদ্ধতির। চা বাগানগুলোয় স্থাপন করা হয় ‘ট্রলি রোড’। ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে ট্রলি রোডের সরাসরি সংযোগ ছিল রেলস্টেশনের ইয়ার্ড পর্যন্ত। প্রথম দিকে ছিল ধাক্কা ট্রলি। অর্থাৎ ট্রলিকে চা বাগান থেকে চা বোঝাই করে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে বহু কষ্টে রেলস্টেশনের ইয়ার্ড পর্যন্ত নিয়ে যেত চা-শ্রমিকরা। সেখান থেকে মাথায় করে রেলের বগিতে তোলা হতো বস্তা বোঝাই চা। পরবর্তীতে ১৯৪০ সালের দিকে আসে কয়লা ইঞ্জিন চালিত ট্রলি; যা ষাটের দশক পর্যন্ত টিকে ছিল এ দেশে। ধীরে ধীরে চা বাগানগুলোয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। অনেক বাগানে তৈরি হয় ইট-সলিংয়ের রাস্তা। বাড়তে থাকে যানবাহনের সংখ্যা। ট্রাক্টর বা হ্যান্ডল সিস্টেম ট্রাকে করে চা-পাতা বাগান থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত পরিবহন শুরু হয়। চা শিল্পাঞ্চল থেকে একসময় উঠে যায় কয়লা ইঞ্জিন চালিত ট্রলি।

 

একুশে সংবাদ/এ.ম.প্র/জাহা

Link copied!